নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ১৯৯৮ সালের লোকসভা ভোটের স্মৃতি এখনও টাটকা মলয় ঘটকের স্মৃতিতে। তখন রাজ্যে সদ্য মাথা তুলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএমের সঙ্গে বুক চিতিয়ে লড়াই করার জন্য আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে মলয়ের উপরই আস্থা রেখেছিলেন নেত্রী। টক্করও দিয়েছিলেন সেয়ানে সেয়ানে। কিন্তু মাঝখান থেকে সব গোলমাল পাকিয়ে দেন সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। জিততে না পারলেও লক্ষেরও বেশি ভোট টেনে নেন। তাতেই দিল্লি যাওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় মলয়ের। মাত্র ২৬ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন তিনি। সেই থেকে মলয়ের কাছে আলুওয়ালিয়ার পরিচয় ‘ভোটকাটুয়া’। স্বপ্নভঙ্গের দগদগে ক্ষত এখনও বয়ে চলেছেন মন্ত্রী মলয়।
১৯৯৮-২০২৪—দীর্ঘ ২৬ বছর পর আলুওয়ালিয়াকে মোক্ষম শিক্ষা দিয়ে সেই ক্ষত ভুলতে চান তৃণমূলের এই পোড়খাওয়া নেতা। বলিউড সুপারস্টার শত্রুঘ্ন সিনহা তাঁকে ‘ম্যাজিক ম্যান’ বলেন। বিরোধীরাও মানে আসানসোলের ভোটে মলয়-ম্যাজিক কাজ করে। ২০২২ সালের উপনির্বাচনে শত্রুঘ্নর রেকর্ড মার্জিনে জয়ের পিছনে মলয়বাবুর অবদান মেনে নিয়েছিল সব পক্ষই। আর এবার? মলয়ের ঘনিষ্ঠমহল বলছে, আলুয়াওয়ালিয়াকে হারিয়ে তাঁকে ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না দাদা। তাই, শত্রুঘ্নকে জিতিয়ে বদলা নিতে মুখিয়ে রয়েছেন শাসকদলের সেনাপতি।
ভোটের অনেক আগে থেকেই মলয়ের উপর এজেন্সি-ঝড় বয়ে গিয়েছে। কয়লা পাচার কাণ্ডে তদন্তে নেমে সিবিআই তাঁর অফিসে তল্লাশি করেছে। ইডি একাধিকবার তাঁকে নোটিস ধরিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে আইনি যুদ্ধ করেছেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী। এসবের প্রেক্ষিতে জল্পনার বুঁদবুঁদও উঠেছিল। আনাকানাচে কথা ভাসছিল—জার্সি বদলাতে পারেন মলয়। আসনসোলে প্রার্থী হওয়ার গেরুয়া টোপও গিলতে পারেন তিনি। কিন্তু মমতার অনুগত সৈনিক সব জল্পনায় জল ঢেলে তৃণমূলে থেকে গিয়েছেন। মুগ্ধ মমতাও তাঁর উপর আস্থা রেখেছেন। ভোট-কাণ্ডারির দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁকেই। ফলে, আসানসোল আসনটি নেত্রীর হাতে তুলে দিয়ে ঘরের সমালোচকদেরও জবাব দিতে চান মলয়।
সত্যিই কী পারবেন? মলয় বলছিলেন, ‘১৯৯৮ সালের নির্বাচন আর ২০২৪ সালের নির্বাচনের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সেবার মাত্র কয়েক মাস আগে আমাদের দল তৃণমূল আত্মপ্রকাশ করে। কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল আলুওয়ালিয়াকে। তখন মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি কে তৃণমূল আর কে কংগ্রেস। তাতেও সিপিএমের কাছে মাত্র ২৬ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছিলাম। সেবার উনি প্রচুর টাকা বিলি করেছিলেন। প্রচারই হয়ে গিয়েছিল আলুওয়ালিয়ার নোট আর মলয় ঘটকের ভোট। সেবার নিজের জামানত বাজেয়াপ্ত আটকাতে পারেননি। এবারও কোন সুবিধা করতে পারবেন না।’ আর জার্সি বদলের জল্পনা নিয়ে মলয়ের সাফ কথা—‘আমি কেন বিজেপিতে যাব? সিবিআই, ইডি আমার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ করতে পেরেছে? সুপ্রিম কোর্টে আমার মামলায় ইডি ধাক্কা খেয়েছে। কিছু মানুষ আখের গোছানোর জন্য আমার বিজেপি যাওয়ার খবর রটিয়েছিল। আসানসোলবাসী বুঝে গিয়েছে মলয় ঘটক টিএমসিতে রয়েছেন। তৃণমূলেই থাকবে।’