বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
আগামী ১৯ মে পাটনায় ভোট। সেই অর্থে ১২ মে ছিল শেষ রবিবারের প্রচার। কিন্তু রবিবাসরীয় প্রচার বলতে বাংলা যেটা বোঝে, তা এখানে নেই। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী রবিশঙ্কর প্রসাদের সমর্থনে এনডিএ-র পথসভা ছিল মুসল্লহপুর এলাকায়। রাজেন্দ্রনগর টার্মিনাল থেকে অটোয় সেখানে যাওয়ার পথে রাস্তার দু’ধারে চোখে পড়ল ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষার গুচ্ছ গুচ্ছ কোচিং সেন্টার। রাস্তার দু’ধারে ব্যানার-হোর্ডিংয়ে বড় বড় বিজ্ঞাপন তাদের। ঠিক যেন বড়বাজার এলাকায় সার দিয়ে সোনার দোকান কিংবা কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের দোকান। এই ভোটের বাজারে রাজনৈতিক দলগুলির মাইক প্রচার খুব একটা দেখা না গেলেও, সেইসব কোচিং সেন্টারের ট্যাবলো ছুটতে দেখা গিয়েছে রাস্তাজুড়ে। আসলে পাটনার ভোটসংস্কৃতিটাই এরকম।
শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা ইনকাম ট্যাক্স মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল কলেজফেরত কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে। তাঁদের দাবি, ‘অন্য কোথায় কী হয় জানি না। কিন্তু এখানে এমনটাই চল। বাইরে থেকে দেখে কিছুতেই বোঝা যাবে না যে এখানে ভোট হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও এই একটি ব্যাপারে সবাই এক।’ অটো ধরার জন্য পাশে দাঁড়ানো অফিসফেরত এক মধ্যবয়সি ব্যক্তির কথায়, ‘প্রচারে এই অলিখিত বিধিনিষেধের জন্যই হয়তো এখানে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার অনেক পরে বহু মানুষ তা জানতে পারেন।’
কংগ্রেসের রাজ্য দপ্তর থেকে কিছুটা এগিয়ে গোলঘরের কাছে কথা হচ্ছিল ওই দলেরই এক নেতার সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘এখানে কোনও দলই দেওয়াল লিখন বা ব্যানার-হোর্ডিং লাগায় না। আর এখন এসবের খুব একটা দরকারও পড়ে না। যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল ভোটের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে, সেখানেই ভোটাররা চটজলদি সব জেনে যাচ্ছেন। প্রার্থীর নাম-পরিচয়, গত পাঁচ বছরের খতিয়ান, সাফল্য-ব্যর্থতা সব।’ এই কারণে রাজনৈতিক দলগুলিও সক্রিয়তা বাড়িয়েছে সেখানে। প্রার্থীরাও প্রচার-সভা নিয়ে নিয়মিত ‘আপডেট’ দিচ্ছেন তাঁদের সমর্থকদের।
বিজেপির রাজ্য দপ্তরে পাটনার এই ভোটসংস্কৃতি নিয়েই কথা হচ্ছিল দলের অন্যতম নেতা কুমার সচিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে বিহার প্রপারটি ডিফেসমেন্ট অ্যাক্ট খুব কড়া। এখানে তাই দেওয়াল লেখা বা ব্যানার-হোর্ডিং লাগানোর হ্যাপায় যেতে চায় না কোনও দলই। তার চেয়ে এখানে ঘরে ঘরে প্রচার, রাস্তায় প্যামফ্লেট বিলি, সভা, রোড শোয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়। এভাবেই এখানে প্রচার চলছে।’ একই সুর আরজেডির রাজ্য দপ্তরেও। দলের অন্যতম প্রদেশ মহাসচিব সঞ্জয় যাদব বলেন, ‘দেওয়াল লেখা, ব্যানার-হোর্ডিং লাগানো নিয়ে প্রশাসন বেশ কড়া। তাই মূলত ঘরে ঘরে প্রচার, সভা, রোড শোতেই জোর দেওয়া হয়েছে।’ একই বক্তব্য উঠে এসেছে জেডিইউ নেতাদের মুখেও।
তবে পাটনায় যে ব্যানার-হোর্ডিংয়ের সংস্কৃতি একেবারেই নেই, তেমনটা নয়। কিন্তু, ভোটের আগে প্রার্থীর সমর্থনে এই ধরনের প্রচার নৈব নৈব চ। কারণ, শহরের অধিকাংশ দেওয়ালই মধুবনী চিত্রে চিত্রিত। এ যেন ভোটের এক অন্য সংস্কৃতি! নিজেদের ঐতিহ্য, পরম্পরা রক্ষা করার।