পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা।প্রতিকার: একটি ... বিশদ
শনিবার ঝাউবনের গা ছুঁয়ে যাওয়া বালির তটরেখা ধরে চলতে চলতে দেখা হল হরিয়ানার ঝিন্দের বাসিন্দা হেমলতা কমকিশোর জাঙ্গরার সঙ্গে। তিনি সান্তারা দেবী, হীরা বিমলা, দশ বছরের মণিশঙ্কর সহ ২৫ জনের একটি দল নিয়ে এই প্রথম সাগর স্নানে এসেছেন। বললেন, শুক্রবার অনেক রাতে এসেছি। কোথায় থাকার জায়গা আছে জানি না। তাই ৪ নম্বর ঘাটের দিকে একটি ঝুপরিতে রাত কাটালাম। হাসতে হাসতে বললেন, মচ্ছর খুব। তার দংশনে ঘুমতে পারিনি। এরপরই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, আচ্ছা বেটা মকর সংক্রান্তির স্নান কবে বলতে পার? এ নিয়ে যাকে জিজ্ঞাসা করি সঠিক বলতে পারছে না। কেউ বলছে ১৪ জানুয়ারি মাঝরাতে। কেউ বলছে ১৫ জানুয়ারি ভোর থেকে। আসলে সোমবার স্নান ভেবে আগে থেকে ওইদিন রাতের ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে। এখানে এসে এই নানা মুনির নানা মত শুনে মুশকিলে পড়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকায় অস্বস্তিতে পড়তে হল। উত্তর পরে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে পা বাড়ালাম সামনের দিকে। সাগরের ঠান্ডার চোরা বাতাস চোখে, মুখে লাগছে। ১ নম্বর ঘাট দিয়ে সোজা উত্তরমুখো চললাম। স্নান সেরে অনেকেই পুজো দিতে যাচ্ছেন কপিলমুনির মন্দিরের দিকে। ভক্তদের সঙ্গে কথা বলছিলেন কপিলমুনি মন্দিরের অধ্যক্ষ জ্ঞানদাস মোহন্ত। কপালে তিলক, পরনে সাদা ধুতি। হাতে ওয়াকিটকি। নানা জায়গা থেকে একের পর এক ফোন আসছে। তার উত্তর দিচ্ছেন। আবার কখনও মন্দিরের ভিতরের একপাশে খোলা জায়গাতে অতিথি সাধু, সন্ন্যাসী ও স্নানার্থীদের ভাণ্ডারায় সবাই ঠিকমতো প্রসাদ পাচ্ছে কি না, তার তদারকি করছেন। তারই ফাঁকে তিনি বললেন, এবার দু’দিন স্নান। ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা ৯ মিনিট থেকে মকরসংক্রান্তির স্নান শুরু হচ্ছে। পরদিন ১৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা ৯ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এরমধ্যে মোক্ষস্নানের সময় মঙ্গলবার ভোর ৪ টে থেকে ৭টার মধ্যে হবে। জেলাশাসককের মেলা অফিস ছাড়িয়ে একটু এগলেই ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রম। সেখানে গিয়ে দেখা গেল ঢোকার মুখে স্নানের সময় একটি কাগজে লিখে সাঁটানো রয়েছে। তার থেকে কিছুটা তফাতে বসে সেবাশ্রমের সম্পাদক স্বামী জিতাত্মানন্দ মহারাজ ও জব্বলপুর থেকে আগত মহারাজ স্বামী ভুদেবানন্দ। স্বামী জিতাত্মানন্দ মহারাজ বিনয়ের সুরে বললেন, দেখুন স্নানের দিনক্ষণ নিয়ে যাতে কোনও বিভ্রান্তি না হয়, সেজন্য ভক্তদের সুবিধার্থে দেওয়ালে সাদা কাগজে লিখে দিয়েছি। বললেন, ১৪ জানুয়ারি সোমবার মধ্যরাত ১ টা ৪৮ মিনিট থেকে মকর সংক্রান্তির স্নান শুরু হচ্ছে। তা চলবে মঙ্গলবার দিন ১১ টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত। এর মধ্যে মোক্ষস্নান মঙ্গলবার ভোরে সূর্যদয়ের আগে ৪ টে থেকে ৫ টার মধ্যে। স্বামীজির কথায়, মেলার ক’দিন লাখো লাখো মানুষের সেবায় ব্যস্ত থাকতে হবে। তাই শুরুর দিন গুরুর মূর্তি স্নানের সঙ্গে সঙ্ঘের সন্ন্যাসী থেকে কয়েকশো সেবাকর্মী ও ভক্তদের সাগরে ডুব দিয়ে শুদ্ধ হতে হয়। প্রাচীন পঞ্জিকা মতে মঙ্গলবার ১৫ জানুয়ারি ভোর থেকে দুপুর ১১ টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত মকরের স্নান। মোক্ষলাভের স্নানের সময় হল পৌনে ৮টা থেকে সোয়া ৯ টা পর্যন্ত। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে, ১৪ জানুয়ারি সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের পর সংক্রান্তির স্নান শুরু। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ জানুয়ারি সকাল ১১টা ৪৭ থেকে সন্ধে ৭টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত স্নান চলবে। সব মিলিয়ে সাগরসঙ্গমে স্নানের সময় নিয়ে মেলা জুড়ে শুধুই প্রশ্ন।