বিদ্যার্থীরা কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষার ভালো ফল করবে। বিবাহার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের কারও ... বিশদ
চলমান গাড়িতে বসেই একে একে পার হবেন দিনারা, কড়েরা। এখানে পাহাড়ের মাথায় আছে কড়েরা দুর্গ। হাতে সময় থাকলে দু’দণ্ড জিরিয়ে নেওয়া যায় এখানে। পকোড়া অথবা সামোসা সহযোগে এককাপ গরম চায়েও চুমুক দেওয়া যেতে পারে। প্রধান রাস্তা থেকে কয়েক কিমি দূরে পাহাড়ের মাথায় কড়েরা দুর্গও দেখে আসা যায়। না হলে ফের চলা শুরু। চার লেনের ঝকঝকে রাস্তা। চারপাশে খেতি জমি আর বুন্দেলখণ্ডের গ্রানাইট পাথরের স্তূপ। কড়েরার পর আসবে আমোলা। তারপর সিন্ধ্নদী ও তার ওপর তৈরি ব্রিজ। ব্রিজ পার হয়ে কিছুটা গেলেই ২৫ নম্বর জাতীয় সড়ক শেষ হয়ে শুরু হবে ৩ নম্বর জাতীয় সড়ক। যা আগ্রা থেকে শিবপুরী হয়ে গিয়েছে মুম্বই।
শিবপুরী ঢোকার ১২-১৩ কিমি আগেই পড়বে মাধব ন্যাশনাল পার্ক। একদা যা ছিল রাজা-মহারাজাদের শিকারের জায়গা। ১৯১৬ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ এখানে একদিনে আটটি বাঘ মেরেছিলেন বলে শোনা যায়। তারও অনেক আগে ১৫৬৪-তে মোগল সম্রাট আকবর মাণ্ডুর রূপমতীকে না পেয়ে ফেরার পথে এখান থেকেই হাতি ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ অনেক বছর আগে এখানে ছিল গভীর অরণ্য এবং বন্যপ্রাণীর প্রাচুর্য। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এই অরণ্য ১৯৫৮ সালে জাতীয় উদ্যানের শিরোপা পায়। পরে গোয়ালিয়রের মহারাজা মাধব রাও সিন্ধিয়ার নামে এর নামকরণ হয় মাধব ন্যাশনাল পার্ক। বর্তমানে এর আয়তন ৩৫৪ বর্গ কিমি।
জাতীয় সড়ক থেকে পার্কে ঢোকার আগে ডানহাতি পথে আজাদ হিন্দ ফৌজের কর্নেল জি এস ধিলোঁর বাড়ি এবং সমাধিস্থল। সেখানে একটা স্যালুট ঠুকে সরাসরি ঢোকা যাবে পার্কে। গেটে অবশ্যই সিকিউরিটি আটকাবে। কাছেই কাউন্টারে গিয়ে জাতীয় উদ্যানে ঢোকার টিকিট, গাড়ির টিকিট ও গাইডের টিকিট কেটে নিলেই চলবে। পার্কে প্রবেশে আর কোনও বাধাই থাকল না।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, মাধব ন্যাশনাল পার্ক ঘোরার আদর্শ সময় হল অক্টোবর-মে। পার্কে ঢোকা যায় সকাল ৬.৩০-১০টা। দুপুর ২.৩০-সন্ধ্যা ৬টা। প্রবেশমূল্য ভারতীয়দের ১৫ টাকা মাথাপিছু। গাইড চার্জ ৫০ টাকা। প্রাইভেট গাড়ি ও বনদপ্তর অনুমোদিত জিপসি-র প্রবেশমূল্য আলাদা।
জাতীয় উদ্যানে ঢুকে কিছুটা যাওয়ার পর বাঁদিকে সখ্যসাগর লেক। এটি গোয়ালিয়র রাজ পরিবারের রাজমাতার নামে নামাঙ্কিত। প্রকৃতপক্ষে এই জাতীয় উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ এই সখ্যসাগর ও মাধবসাগর লেক। অতীতে মনিয়ার নদীতে বাঁধ দিয়ে লেক দুটি তৈরি হয়েছিল। নদী আজ অবলুপ্ত। কিন্তু লেক দুটি রয়ে গেছে। লেকের ধারে ডানদিকে পিলারের ওপর ছাদ দেওয়া মঞ্চ। আগে ওই মঞ্চে বসত নাচগানের আসর। সখ্যসাগর লেকের ওপর শ্যুটিং বক্স দেখতে ভোলা চলবে না। আগে এই বাক্সের মধ্যে বসেই বন্যপ্রাণী শিকার করা হতো।
শীতকালে গেলে লেকের জলে পরিযায়ী পাখির মেলা চোখে পড়বে। তা না হলেও দেখা মিলবে লেসার হুইসলিং টিল, করমোরান্ট, ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন প্রভৃতির। চেনা গাছের মধ্যে দেখা যাবে অর্জুন, গর্জন, সালাই, খয়ের, পলাশকে। বন্যপ্রাণীদের মধ্যে সহজেই চোখে পড়বে চিতল হরিণ, বারশিঙ্গা, চিংকারা, নীল গাই, ময়ূর, বাঁদর, ব্ল্যাক বাক, শ্লথ বিয়ার, ঢোল, স্টাইপড হায়না, বুনো বেড়াল ও শেয়ালদের। চিতা আছে বলা হলেও দেখা মেলা মুশকিল। পাশাপাশি, বনবিভাগের দাবি এই অরণ্যে এখনও বাঘ ও হাতি রয়েছে। বনের ভেতর আরও এগলে আছে সুন্দর ছিমছাম একটা দোতলা বাড়ি। নাম জর্জ ক্যাসল। এটি তৈরি হয় ১৯১১-তে। ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ ওই বছর ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন। তিনি শিবপুরীর এই অরণ্যে এসে থাকবেন এবং শিকার করবেন। এই আশা নিয়ে গোয়ালিয়র রাজ জিয়াজি রাও সিন্ধিয়া এই বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন। কিন্তু রাজা আসেননি। ইতালিয়ান স্থাপত্যে তৈরি জর্জ ক্যাসলে প্রবেশে বাধা নেই। কিন্তু থাকা যাবে না। কারণ আমরা কেউই রাজা বা মহারাজা নই। নিতান্তই মধ্যবিত্ত বাঙালি।
বনের ভিতর আরও দেখা যাবে ভাদাইয়া কুণ্ড। সখ্যসাগরে বোটিংও করা যাবে। মাধব লেকের পাড়ে দু’চার পা হেঁটেও নেওয়া যায়। ঘণ্টা কয়েকে বন পরিক্রমা শেষ করে সটান শিবপুরী। একটা হোটেলে বডি ফেলে দিয়ে বিশ্রাম। খাওয়া দাওয়া, বিশুদ্ধ জৈন ভোজনালয়ে পরিচ্ছন্ন নিরামিষ ভোজন।
পরদিন শিবপুরী শহরে সিন্ধিয়া ছত্রী, রাধাকৃষ্ণ, রামসীতা ও শিবমন্দির দেখে নেওয়া যায়। একই সঙ্গে মাধব বিলাস প্যালেস, তাঁতিয়া টোপি মেমোরিয়াল, নারোয়ার দুর্গ, ভোরা খোঁ জলপ্রপাত দেখতে অনায়াসে একটা বেলা কাটানো কোনও ব্যাপারই নয়। তারপর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রওনা দেওয়া দুর্গশহর গোয়ালিয়রের দিকে। অষ্টাদশ শতকে যে শহরে রাণোজি রাও সিন্ধিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গোয়ালিয়র রাজবংশ।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে