বিদ্যার্থীরা কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষার ভালো ফল করবে। বিবাহার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের কারও ... বিশদ
এসবিএসটিসির এমডি গোদালা কিরণ কুমার বলেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো আমরা চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব পরিষেবা দিতে। আমরা চালক ও কর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা এই বিপদের দিনে সরকারের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা সচল রেখেছেন।
করোনা ভাইরাসের ছোবলে ভারতবর্ষের জনজীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে এরাজ্যেও। তবে এই বিপদে রাজ্যও ২১ মার্চ থেকে চার দফায় ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউন পালন করেছে। প্রথমদিকে লকডাউনে মানুষকে কার্যত গৃহবন্দি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছিল সরকার। স্কুল, কলেজ, অফিস সবই ছুটি। পরে নিয়মের কিছুটা শিথিলতা থাকলেও গাড়ি চলাচলে খুব বেশি ছাড় ছিল না। তাই বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক, অন্য রাজ্যে আটকে থাকা বাসিন্দাদের কীভাবে নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছনো হবে তা নিয়ে সরকারের চিন্তার অন্ত ছিল না। এই চরম সঙ্কটের মুহূর্তেই রাজ্য সরকারের পাশে এসে দাঁড়ায় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে করোনা যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা নেয় তারা। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া বা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানো সবই করেছে তারা।
সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লকডাউনে রাজ্যের মধ্যেই পরিযায়ী শ্রমিক ও ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় ফেরা ১ লক্ষ ৮১হাজার ৬৬৩জন যাত্রীকে নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তারমধ্যে শেষদিনে ৬ হাজার ৪১৯ জনকে নিরাপদে নিজ এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই কাজে সংস্থার ৫ হাজার ৯৭৭টি বাস পরিষেবা দিয়েছে। তবে শুধু রাজ্যের মধ্যেই নয়, এই সময়ে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের পৌঁছে দেওয়া যা অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় ফিরিয়ে আনার কাজেও ব্যবহৃত হয়েছে এসবিএসটিসির বাস। এক্ষেত্রে ৮৭টি বাস ৩হাজার ৪৮২জনকে এই পরিষেবা দিয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল এসবিএসটিসির বাসগুলি। এখনও লকডাউনের প্রায় আড়াই মাসে ৪৯ হাজার ৭৮০জন স্বাস্থ্যকর্মীকে এই পরিষেবা দিয়েছে সংস্থা। ব্যবহৃত হয়েছে ১৬২৪টি গাড়ি। লকডাউনে গ্রিন জোনে ৫৬৩টি বাস চালিয়ে ১৭হাজার ১৯৫জন যাত্রীকে প্রয়োজনীয় গন্তব্যে নামিয়েছেন সংস্থার কর্মীরা।
সংস্থা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২৬মে পর্যন্ত সরকারি অর্থে ২০লক্ষ ৫১হাজার ৮৪০ কিলোমিটার ফ্রি সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। ৪হাজার ৩২২টি গাড়ি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে, এই সময়ে এই পরিষেবা দিয়ে রীতিমতো হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে বহু বাস চালক ও কর্মীদের। বিহারে বাস নিয়ে গিয়ে দুই চালক সহ দুটি বাস নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। বহু উৎকণ্ঠায় দিন কেটেছিল পরিবারের। পাশাপাশি মালদহে যে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন সংস্থার চালক, কর্মীরা, পরে তাদের হাতেই মার খেতে হয়েছিল। হেনস্তার ঘটনা ঘটেছিল গলসিতেও। তবু পিছু হটেনি তারা। করোনা আতঙ্কও প্রতি মুহূর্তে গ্রাস করেছিল চালকদের। যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়কে জয় করেই বাস চালিয়েছেন চালকরা। তাঁদের পরিবারের লোকজন চিন্তায় রাত জাগলেও শ্রমিকদের নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে তৎপর ছিলেন চালক ও কর্মীরা।