কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে জাপানি ‘বনসাই’ শব্দের উৎপত্তি। এককথায়, বনসাই হল শক্ত কাণ্ড বিশিষ্ট গাছকে নান্দনিকভাবে খর্বাকৃতি করার শিল্প। আর এই শিল্পকেই ২০ বছর ধরে আঁকড়ে রেখেছেন ববিন। ছেলেবেলার নেশাকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। নিজের প্রতিভায় শান দিতে ট্রপিক্যাল বনসাই স্কুল থেকে তিন বছরের আন্তর্জাতিক ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। প্রশিক্ষণ দিতে উড়ে গিয়েছেন ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্সে। বিভিন্ন পুষ্প প্রদর্শনীতে তাঁর তৈরি বনসাই প্রশংসা কুড়িয়েছে। পাশাপাশি নানা প্রতিযোগিতাতেও টক্কর দিয়ে একাধিকবার ছিনিয়ে নিয়েছেন সেরার শিরোপা। বনসাইকে কীভাবে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করা যায়, সেই গল্প শুনতে গিয়ে জানা গেল, একটি বনসাই পাঁচ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা, বা তারও বেশি দরে বিক্রি হতে পারে। মূল্য নির্ধারিত হয় সংশ্লিষ্ট বনসাইয়ের প্রজাতি, তার আকৃতি এবং অবশ্যই বয়সের উপর। বনসাই একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সব গাছের বনসাই হয় না। যেসব গাছের সহ্য ক্ষমতা বেশি, দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে, এক্ষেত্রে সেই ধরনের গাছকেই মূলত বেছে নেওয়া হয়। সারা বছরই বনসাই বানানোর প্রক্রিয়া চলে। তবে, বর্ষাই হল এর জন্য উপযুক্ত সময়। কারণ, বৃষ্টির জলে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকে। যা গাছের বৃদ্ধির পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু, বনসাইয়ের পরিচর্যা চালিয়ে যেতে হয় নিয়মিত। এই শিল্পের মধ্যে যে প্রাপ্তির আনন্দ রয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। যে কোনও জিনিসই পুরনো হলে তার দর কমে। বনসাইয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু ঠিক উল্টো। যে বনসাই যত পুরনো, তা ততই মূ্ল্যবান। আর এখানেই লুকিয়ে রয়েছে এর ব্যবসায়িক দিক। বনসাই করার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যেমন গাছ নির্বাচন, মাটি তৈরি, স্টাইল বা নকশা নির্বাচন এবং পরিচর্যা। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ক্রান্তীয় আবহাওয়ায় যে ধরনের গাছ বনসাইয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত, সাধারণত সেই ধরনের চারাই বেছে নেওয়া হয়। বট, তেঁতুল, পাকুড়, শেওড়া, কামিনী, অর্জুন থেকে শুরু করে বোগেনভেলিয়া, ব্রায়া, গন্ধরাজ, টগর, জবা, কাঞ্চন, ক্যালিয়েন্ড্রা, জ্যাকুনিয়া, মালবেরি, বাবলা, ছোট পেয়ারা— তালিকাটি নেহাত কম নয়। এছাড়া এখন নানারকম বিদেশি গাছের বনসাই হচ্ছে। ফ্রুটিং বনসাইয়ের মধ্যে বৈঁচি গাছ, কমলালেবু, এলাচি লেবু বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া, ঠাণ্ডার জায়গায় আপেল গাছের বনসাই খুব ভালো হয়। বিদেশে বনসাই নিয়ে খুব ভালো কাজ হচ্ছে। আমাদের এখানে চাহিদা কম থাকায় বনসাইয়ের জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম এবং উৎকৃষ্ট সার পেতে বেশ সমস্যা হয়। গাছ নির্বাচনের সময় পছন্দের গাছটি নার্সারি থেকে কিনতে হয়। এর জন্য গাছ পিছু খরচ পরে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। সম্ভব হলে রাস্তার ধার থেকে সংশ্লিষ্ট গাছের চারা সংগ্রহ করাও যেতে পারে।
গাছ নির্বাচনের পর আসে মাটি তৈরির পালা। মাটির সঙ্গে পুরনো গোবর সার মেশাতে হয় ৫০ শতাংশের অনুপাতে। অর্থাৎ, অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক গোবর সার। ১০ ইঞ্চি টবের (তা মাটি, সেরামিক বা ফাইবারের হতে পারে) হিসেবে ১০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়োর সঙ্গে ৫০ গ্রাম স্টেরামিল ও দু’চামচ সুপার ফসফেট লাগবে। এর সঙ্গে মেশানে হবে ১০ শতাংশের অনুপাতে লাল বালি। গাছ লাগানোর মাসখানেক পর দেখা যাবে সেটি বাড়তে শুরু করেছে। তখন নীচ থেকে দেড় থেকে দু’ফুট রেখে গাছটিকে ছেঁটে ফেলতে হবে। এর দিন দশেক পর দেখা যাবে নতুন শাখা-প্রশাখা বেরতে শুরু করেছে। পরে প্রধান মূলটি এক থেকে দেড় ইঞ্চি রেখে কেটে ফেলতে হবে। এরপর আসছে স্টাইল নির্বাচনের পর্ব। অর্থাৎ, কোন ডালটি রাখা হবে আর কোনটি বাদ দেবেন। পছন্দমতো আকৃতির জন্য ডালগুলিকে অ্যালুমিনিয়ামের তার দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। একাধিক স্টাইলের বনসাই হয় — ১) ফরম্যাল আপরাইট ২) ইনফরম্যাল আপরাইট ৩) স্ল্যানটিং ৪) ব্রুম ৫) ক্যাসকেড ৬) উইন্ডসুইপ্ট ৭) ফরেস্ট বনসাই ৮) রুট ওভার রক ইত্যাদি।। পরিচর্যার জন্য প্রতি মাসে দু’বার করে জলের সঙ্গে তিন/চারদিন ভেজানো সর্ষের খোলের জল ৫০ শতাংশের অনুপাতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। বর্ষার সময় যেহেতু বৃষ্টির জল পাওয়া যায়, তাই এই সময় আলাদা করে পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। অনেকে বর্ষার সময় গাছের গায়ে খড় জড়িয়ে রাখেন ঝুরি নামানোর জন্য। তবে, যাঁরা এই প্রথম হাতেকলমে বাড়িতে বনসাই করতে চান, তাঁদের জন্য এই সহজ পাঠ নিশ্চয়ই খুব কাজে লাগবে। আর ভবিষ্যতে বনসাইকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি স্বচ্ছন্দে পা বাড়াতে পারবেন। ছবি: সংগৃহীত