অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়: বেগুন চাষে ভালো ফলন পেতে হলে চাষিদের সুসংহত উপায়ে সঠিক নিয়ম মেনে রোগপোকার আক্রমণ রোধ করতে হবে। এমনটাই বলছেন কৃষি আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এখন বছরের তিন মরশুমেই বেগুনের চাষ করা যায়। যে সমস্ত চাষি বৈশাখ মাসে বেগুনের চাষ করেছেন, তাঁরা এখন বর্ষার সময় ফলন পাবেন। কিন্তু ভালো উৎপাদন পেতে হলে বেগুনের জমিতে রোগপোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রথমেই কঠোরভাবে তা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, বেগুনের জমিতে দ্রুত রোগপোকার আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বেগুনে যেসব পোকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ডগা ছিদ্রকারী পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা, বাঘাপোকা, সাদামাছি, লালমাকড়, চিরুনিপোকা। এই পোকাগুলি সারাবছর ধরে বেগুনের ক্ষতি করে। ডগা ছিদ্রকারী পোকার শুককীট দেখতে ছোট ও সাদা রঙের হয়। এরা আক্রান্ত গাছের ডগায় থাকে। এদের আক্রমণে গাছের কচি ডগা ঝিমিয়ে পড়ে। ফল ছিদ্রকারী পোকা ছোট সাদা রঙের হয়। এদের শুককীট ফলের মধ্যে থাকে। ডিম থেকে শুককীট বের হওয়ার পরেই ছিদ্র করে ওরা ফলের মধ্যে ঢুকে যায়। তাই ফলের গায়ে ছিদ্র থাকে এবং ছিদ্রের মধ্যে শুককীটের মল দেখা যায়। বাঘাপোকা সব সব্জির জমিতে দেখা যায়। এরা আকারে অনেকটা গোল হয়। বাদামি রঙের ডানার উপর কালো ফুটকি থাকে। এরা গাছের পাতার সবুজ অংশ চেঁছে খায়। সাদামাছি খুব ছোট আকারের। ডানাযুক্ত ও সাদা রঙের হয়। গাছে প্রচুর পরিমাণে থাকে। এরা পাতার নীচে থাকে ও রস শুষে খায়। এর ফলে পাতার রং হলদেটে হয়ে যায়। এরা তুলসী রোগের জীবাণু (ভাইরাস) বহন করে। লালমাকড়ের আক্রমণে গাছের পাতা অকালে শুকিয়ে যায়। এরা পাতার নীচে থাকে এবং রস চুষে খায়। এদের ৮ জোড়া পা আছে। তাই এদের মাকড় বলা হয়। এদের জীবনকাল ১৯-২০ দিনের মতো। এই পোকাগুলির দমন করার জন্য ড্রাইকোফল ১৮.৫ শতাংশ প্রতি লিটার জলে ২ মিলি লিটার হিসেবে গুলে বিঘাপ্রতি ৭০-৮০ লিটার ওষুধ মেশানো জল স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ছড়াতে হবে। এছাড়াও কান্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে বেগুনের ডগা ঝুলে যায়। পোকা মারার সর্বাঙ্গবাহী ওষুধ এন্ডোসালফান ৩৫ শতাংশ প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম করে গুলে বিঘাপ্রতি ৭০-৮০ লিটার স্প্রে করতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণে বেগুন গাছ পচে যায়। রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছত্রাকনাশক ওষুধ যেমন কার্বান্ডাজিম প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম মিশিয়ে বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ লিটার
জল স্প্রে করতে হবে। কখনও কখনও বেগুন শক্ত হয়ে যায়। তার কারণ, গাছের গোড়ায় নিমাটোড লাগার কারণে আর ঠিক ওষুধ না দেওয়ার জন্য। নিমাটোডের লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। কখনও বেগুন গাছ ঢলে পড়ে যায় ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক জাতীয় রোগের জন্য। বেগুনের খেতে প্রতি পাঁচ সারি অন্তর এক সারি হলুদ ও গাঁদা ফুল গাছ লাগিয়ে এই সংক্রমণ অনেকটাই কমানো যেতে পারে। এভাবে নিয়ম মেনে রোগপোকার আক্রমণের প্রতিরোধ করলে বেগুনে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।