ব্রতীন দাস: বুলবুলের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে সুন্দরবন অঞ্চলে খেসারি, সূর্যমুখী ও ভুট্টা চাষে জোর দিচ্ছে কৃষি দপ্তর। এজন্য কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে চাষিদের বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে উন্নত প্রথায় কীভাবে চাষ করতে হবে তা নিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারি প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে শীতকালিন সব্জি চাষের কিট দেওয়া হচ্ছে নিখরচায়। সেই কিটে পালং, ধনে, উচ্ছে, বরবটি, লাউ, কুমড়ো সহ ১২-১৪ রকমের সব্জির বীজ থাকছে। একটি কিটে যে পরিমাণ বীজ দেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে ১০-১১ জন কিচেন গার্ডেনে চাষ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি আধিকারিকরা। সুন্দরবন এলাকায় যেসব নিচু জমিতে এখনও জল দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে ধান চাষ করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। সেক্ষেত্রে কৃষক নিজের বাড়ির উঠোনে প্লাস্টিকের উপর বা ট্রেতে যদি বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারেন, তাহলে প্যাডি ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের সাহায্যে ওই সব জমিতে ধান বোনা যেতে পারে। ততদিনে জমিতে জমে থাকা জলের পরিমাণও অনেকটা কমে আসবে। ফলে ধান রোয়া করার মেশিন চালাতে অসুবিধা হবে না। মিনাখা ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা অনামিকা বোস জানিয়েছেন, তাঁর ব্লকে ৬,৬০০ হেক্টর জিমতে ধান ও সব্জি মিলিয়ে চাষ হয়েছিল এবার। বুলবুলের ধাক্কায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী ও হাইব্রিড ভুট্টা চাষের এলাকা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বারবার। তাঁদের বোঝানো হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় মাছ ও পোল্ট্রি চাষ রয়েছে। ফলে সেখানে ভুট্টা বিক্রির সুযোগ আছে। ভুট্টার গাছ গবাদি পশুরও খুব ভালো খাবার। ফলে লোকসানের আশঙ্কা নেই। তারপরও বলা হয়েছে, কৃষকরা যদি একলপ্তে ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন, তা হলে কৃষি দপ্তর কিনে নেবে। যেসব জমিতে কৃষক ভুট্টা কিংবা সূর্যমুখী চাষ করবেন না, সেখানে খেসারি ডাল চাষ করার সুযোগ রয়েছে। সেটাও বলা হচ্ছে। মেশিনের সাহায্যে বোরো ধান বোনার ব্যবস্থা করা হবে। সেজন্য ট্রেতে বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। চাষিরা জানিয়েছেন, সর্ষে বোনার পরই আছড়ে পড়ে বুলবুল। ফলে সবটাই শেষ হয়ে যায়। কিছু কৃষক অবশ্য নতুন করে সর্ষে বুনছেন। তবে সেই এলাকা খুব বেশি নয়।
সন্দেশখালি দু’নম্বর ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা ড. সজল পতি জানিয়েছেন, যেসব জমিতে এখনও ধান কাটা হয়নি, সেখানে পয়রা ফসল হিসেবে খেসারির বীজ ছড়িয়ে দিতে বলা হচ্ছে। এতে বাড়তি কোনও খরচ হবে না। এছাড়া সূর্যমুখী ও ভুট্টা চাষের এলাকা বাড়ানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ১৮০০ কেজি খেসারি বীজের পাশাপাশি ১৮০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ ও ১৪০ কেজি ভুট্টার বীজ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। চাহিদা বুঝে বীজের পরিমাণ বাড়ানো হবে। সন্দেশখালি-২ ব্লকে এবার ৯,৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে ৯,৩০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জলদি প্রজাতির যেসব ধান (বিশেষ করে জিরেকাঠি) পেকে গিয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে ক্ষতি একটু কম হয়েছে। দুর্গামণ্ডপ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। ফলে সেখানে কোনও ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। সুসংহত জল বিভাজিকা প্রকল্পে চারশোটি সব্জির কিট দেওয়া হচ্ছে। তা দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর চার হাজার জন চাষ করতে পারবেন। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাজীব নাথ জানিয়েছেন, সুন্দরবন এলাকায় যেসব কৃষক খেসারির চাষ করতে চাইবেন, তাঁরা রতন, প্রতীক এই দুই জাতের যেকোনও একটি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিঘায় বীজ লাগবে ৮ কেজি। মূলসার হিসেবে জমিতে দিতে হবে ৬-৭ কেজি ইউরিয়া, ২৫-৩০ কেজি ফসফেট, ৭-৮ কেজি পটাশ। গাছের ৪০-৪৫ দিন বয়স হলে ১৫ লিটার অর্থাৎ এক ব্যারেল জলে ১৫ গ্রাম ১৯:১৯:১৯ দিয়ে স্প্রে করতে হবে। জলে গোলা ইউরিয়ার সঙ্গে অনুখাদ্য হিসেবে চিলেটেড জিঙ্ক প্রতি লিটারে ১ গ্রাম ও বোরাক্স প্রতি লিটারে ২ গ্রাম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল আসার পরে একবার স্প্রে করতে পারলে ভালো।