মেঘ করে থাকা একটা স্যাঁতস্যাতে জীবনে কবে যে সূর্যের আলো ঝলমলিয়ে উঠবে, সেই আশায় বুক বাঁধে শান্তিলাল (ঋত্বিক চক্রবর্তী)। এই শান্তিলাল হল কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দ্য সেন্টিনাল’ নামক একটি ইংরেজি দৈনিকের আবহাওয়া সংবাদদাতা। কিংবা শান্তিলাল একজন সাংবাদিক যে, এখন আবহাওয়ার খবর লেখে। শুধু এখন নয়, পিছন ফিরে তাকালে এই তিরিশোর্ধ্ব অবিবাহিত সাংবাদিকের গোটা জীবনই হাওয়া অফিসে ফোন করে কেটে গিয়েছে। বিনোদন বলতে রাতের নীল ছবি। অফিসের বস (গৌতম ঘোষ) শান্তিকে শুধু মনগড়া খবর লিখতে বলে। অফিসের শেষে অফিসতুতো দাদার (শঙ্কর চক্রবর্তী) সামনে রঙিন গ্লাস সহযোগে শান্তি তার জাগ্রত বিবেকের বিসর্জন হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখ করে। শান্তির বিধবা মা প্রত্যেকদিন কাগজ খুলে দেখে, আজকেও ছেলের বাইলাইন নেই। সেই আয়লা হওয়ার সময় একবার বাইলাইন বেরিয়েছিল। আবার কোনও ঝড়ের আশায় বসে থাকে শান্তি। হঠাত্ একদিন শান্তির হাতে সুপারস্টার নন্দিতা (পাওলি দাম) অভিনীত একটি ছবির প্রিমিয়ারের পাস আসে। দু’চোখ ভোরে রহস্যময়ী নায়িকা নন্দিতাকে দেখতে থাকে সে। দেখা যায় শান্তি সিনেমা হলের যে বাথরুমে গিয়েছিল, সেই বাথরুমেই নন্দিতা সিগারেট খেতে যায়। এখন নন্দিতা জেন্টস টয়লেটে গিয়েছিল নাকি উল্টোটা, সেই রহস্য পরিচালক প্রতীম ডি গুপ্তর কাছেই গচ্ছিত রয়েছে। সেখানেই এক গোয়েন্দা পিউপা থেকে প্রজাপতি হয়ে ওঠার দিকে ডানা মেলতে থাকে। তবে সেই প্রজাপতি রঙিন নয়। অন্ধকারে তার যাতায়াত। সে ফুলের সুবাসের পিছু নেয় না। রহস্যময়ীর গন্ধে সেই নব্য গোয়েন্দা উড়ে যায় চেন্নাই, সিঙ্গাপুর।
প্রথমার্ধে রহস্য দানা বাঁধে কলমের নীচে। দ্বিতীয়ার্ধ এগতে না এগতেই গল্পে রকেটের মতো রঞ্জন (অম্বরীশ ভট্টাচার্য) আসে। কেন আসে? কীভাবে আসে? এইসবের একটাই উত্তর পরিচালক দিয়েছেন। বাইরে তো বাঙালিই বাঙালিকে সাহ্যয্য করবে। ঘটনার ঘনঘটার পরে শান্তির স্যাঁতস্যাতে জীবনে কি সূর্যের আলো দেখা দেয়? এই প্রশ্নের উত্তর এখানে খুঁজে লাভ নেই। তার জন্য সিনেমা হলে যেতে হবে।
প্রত্যেক মরশুমে একই টিম ধরে রাখলে খেলা ভালো হবেই। প্রতীমও সেই পথে হেঁটেছেন। ‘মাছের ঝোল’-এর টিম ধরে রেখে এই ছবিতেও পাওলি এবং ঋত্বিককে রেখেছেন পরিচালক। তাঁদের অভিনয় খুবই ভালো। গৌতম ঘোষ তাঁর চরিত্রে দারুণ। খবরের কাগজের অফিসের পরিবেশ চমত্কারভাবে তুলে ধরেছেন প্রতীম। আসলে এটা তো তাঁর চেনা মাঠ। অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে অম্বরীশের কথা। বাংলা ছবির বিশেষ চরিত্রগুলোতে তিনি অপরিহার্য হয়ে উঠছেন। চিত্রনাট্য খুব আহামরি না হলেও মন্দ নয়। সদ্য রাজনীতিতে পা দেওয়া অভিনেত্রী নন্দিতা যখন সাক্ষাত্কারে বলেন, এই সমাজে পুরুষরা চায় না অব দ্য ওম্যান, ফর দ্য ওম্যান, বাই দ্য ওম্যান। তাই পুরুষরা অভিনয় করতে করতে রাজনীতিতে এলে এত প্রশ্ন ওঠে না। অস্বস্তিতে ভরা সাংবাদিকের মুখ যেন দর্শকদের মুখকেই তুলে ধরে। শুভঙ্কর ভড়ের ক্যামেরা বেশ ভালো। অর্কর সঙ্গীত মানানসই। সব মিলিয়ে বলা যায়, মেঘলা পৃথিবীর মধ্যে এক চিলতে আলোর খোঁজে প্রতীমের উপর ভরসা করে হলমুখী হতেই পারেন দর্শক।

সোহম কর