পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
ক্যান্সার কী?
আমাদের শরীর অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি। কোষের প্রতিনিয়ত বিভাজন ঘটে চলেছে। এখন কোনও কারণে কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন ঘটতে থাকলে তখন সেই অসুখকে ক্যান্সার বলে। অতএব ক্যান্সার হল কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন ও বৃদ্ধি। ক্যান্সার শরীরের যে কোনও জায়গাতেই হতে পারে।
ভয় পাবেন না, চিকিত্সা করান
মুশকিল হল ক্যান্সার শব্দটি শুনলেই মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রোগ চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে চান না! দেরি হয়ে যায় চিকিত্সায়! আর তার কু-প্রভাব পড়ে শরীরে। অথচ বেশ কিছু এমন ক্যান্সার আছে যা চিকিত্সা করালেই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
এই কারণেই ক্যান্সারের সমস্যার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে, তা হল রোগ প্রতিরোধ ও আগাম অসুখ ধরা।
আগাম ধরা পড়লে চিকিত্সা করানোর একটা সময় মেলে ও সেই সময়ের মধ্যে ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার সারিয়েও তোলা সম্ভব।
যে যে ক্যান্সার সমস্যা তৈরি করে
সাধারণভাবে বলা যায়, আগাম ধরা পড়লে মহিলাদের মধ্যে হওয়া ক্যান্সারগুলি তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ। উদাহরণ হিসেবে জরায়ু ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সারের কথা বলা যায়। সেগুলি আগাম ধরা পড়লে অসুখ ভালো হয়ে যাওয়াও সম্ভাবনাও বাড়ে।
পুরুষের যে ক্যান্সারগুলি হয় সেগুলির মধ্যে হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয় এক্ষেত্রেও প্রতিরোধ কিংবা আগাম সনাক্তকরণেই জোর দেওয়া দরকার।
ক্যান্সার সন্দেহ করবেন কখন
কোনও ছোট ঘা যখন সাধারণ চিকিত্সাতেও সারছে না, ওজন যখন কমছে দ্রুত, ক্লান্তি বাড়ছে শরীরে তখনই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। সেক্ষেত্রে আগাম রোগ ধরা পড়লে সার্জারি করে কেমো দিয়ে বা রেডিয়েশন দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
আশার কথা
টেলিভিশন, সংবাদ মাধ্যম, পত্র-পত্রিকায় নানা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের সম্প্রচার ও লেখালেখির ফলে মানুষের কাছে তথ্য অনেক বেশি থাকছে। আজকাল মানুষ সাধারণ শারীরিক উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিত্সকের পরামর্শ নিচ্ছেন। ফলে ক্যান্সারের চিকিত্সা করিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন অনেকেই।
সম্পূর্ণ সারে এমন ক্যান্সার
বেসাল সেল কার্সিনোমা একমাত্র এমন একটি ক্যান্সার যার মেটাস্টেসিস হয় না। স্থানীয় অংশে ক্যান্সার হয়। তাই সার্জারি করে শুধু ওই অংশটুকু বাদ দিলেই চলে। এছাড়া হজকিন্স লিম্ফোমা বা ক্লাসিক্যাল লিম্ফোমার কথা বলা যায়। এই রোগেরও ভালো চিকিত্সা আছে। এই ধরনের একটি দু’টি ক্যান্সার বাদে একেবারে নির্মূল হয় এমন ক্যান্সার বিরল।এইরকম দুই-একটি ক্যান্সার ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুনরায় ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায় এমন ক্যান্সার
প্রস্টেট ক্যান্সার: সাধারণত এই ক্যান্সার হয় বেশি বয়সে। খুব ধীরে ধীরে রোগের অগ্রগতি হয়। প্রাথমিক দিকে ধরা পড়লে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। আবার পরের দিকে ধরা পড়লেও চিকিত্সা করিয়ে দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায়। অনেকক্ষেত্রেই রোগী তার সম্পূর্ণ আয়ুষ্কালের যাত্রা শেষ করতে পারেন এই ক্যান্সারকে সঙ্গে নিয়েই।
থাইরয়েড ক্যান্সার: সাধারণত কম বয়সে হয় এমন ক্যান্সার। থাইরয়েড ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হয়। এগুলির মধ্যে প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যান্সার সার্জারি করালেই রোগ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রয়োজন বুঝলে চিকিত্সক থাইরয়েড অ্যাবলেশন করতে পারেন।
টেস্টিকুলার ক্যান্সার: প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে, টেস্টিকুলার ক্যান্সারও সেরে যায়। বিশেষ করে সেমিনোমা ধরনের ক্যান্সার সম্পূর্ণ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীর একটি টেসটিস বাদ দিতে হয়। তবে তাতে ফার্টিলিটি অক্ষুণ্ণ থাকে।
আমাদের দেশে কোন ক্যান্সার বেশি হয়?
হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার, লাং ক্যান্সারের কথা আগে বলতে হয়। আর তার মূল কারণ হল নানাভাবে তামাক সেবন। আমাদের দেশে তামাক সেবন এক ধরনের অভিশাপ আর তা নানাভাবে দেশের একটা বৃহত্ জনগোষ্ঠীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ক্যান্সার হলে শুধু একজন রোগীর প্রাণহানি হয় না। তার সঙ্গে রোগীর সমগ্র পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রতিককালে আরও একটি ক্যান্সারের ঘটনা বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। অসুখটির নাম খাদ্যনালীর ক্যান্সার বা কোলন, রেকটামের ক্যান্সার। খুব কম বয়সে এমন সমস্যা প্রকাশ পাচ্ছে। কেন বেশি হচ্ছে তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, জাঙ্কফুড ও প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য বেশি খাওয়ার প্রবণতা এবং তার সঙ্গে শাকসব্জি পূর্ণ সনাতন খাদ্যাভ্যাসের অভ্যেস কমে যাওয়া অন্যতম কারণ হতে পারে।
প্রতিরোধ মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের টিকা নেওয়া যায় ৯ বছর বয়স থেকে।