বিশেষ কোনও কর্মের আর্থিক সংস্থান নিয়ে মানসিক চিন্তা বৃদ্ধি পাবে। আর্থিক ঝুঁকি নেবার আগে দুবার ... বিশদ
গালিলিওর জন্ম ১৫৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাবা তাঁকে ডাক্তারি পড়ার জন্য পাঠিয়ে দেন। অবশ্য অর্থাভাবে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে হয়। জীবিকার সন্ধানে তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। সেই সময় গ্যালিলিওর অঙ্কশাস্ত্রের উপর ঝোঁক দেখা যায়। খুব অল্প সময়েই তিনি অঙ্কশাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং পঁচিশ বছর বয়সে পিসার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ক্রমেই দেশ-বিদেশে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইতিমধ্যে তাঁর সমর্থকদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এই সময় তিনি আবিষ্কার করেন হালকা ও ভারী পদার্থ ওপর থেকে ছেড়ে দিলে একই সময় নীচে পড়বে। পিসার হেলানো মিনার থেকে এক পাউন্ড ও দশ পাউন্ড ওজনের দুটো জিনিস একই সঙ্গে ওপর থেকে ফেললেন এবং দেখলেন যে দুটো জিনিসই একই সময়ে নীচে পড়ল। এতে প্রমাণিত হল অ্যারিস্টটলের ধারণা সত্য নয়। এতে অ্যারিস্টটলের মতবাদে বিশ্বাসী অনেকেই তা মোটেই মেনে নিতে চাইলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হতে শুরু করল এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হলেন। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তাও কম ছিল না। ফলে আবার পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গণিতের অধ্যাপক পদ পেলেন এবং তাঁর প্রত্যয় আরও বেড়ে গেল। তিনি নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠলেন।
রোমে গিয়ে পোপ ও যাজকদের তাঁর আবিষ্কৃত টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ দেখিয়ে প্রমাণ করলেন যে, চাঁদ কোনও একটি চকচকে আয়নার মতো পদার্থ নয়। নিতান্তই একটি পর্বত-বহুল উপগ্রহ। টেলিস্কোপের সাহায্যে গ্যালিলিও শনির বলয়ও দেখতে পেলেন। কিন্তু তখনও তিনি বুঝতে পারেননি যে, যাজকরা তাঁর এই আবিষ্কার সুনজরে দেখছেন না। পাদ্রিরা তাঁর বিরুদ্ধে তৎপর হল এবং তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে বোঝাতে লাগল যে গ্যালিলিওর মতবাদ ভুল। গ্যালিলিও-ও চুপ করে থাকার পাত্র নন। তিনি ১৬১২ সালের একজন পাদ্রির বিরুদ্ধে লিখলেন যে, তিনি মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। সেই পাদ্রি তখন পোপের কাছে গিয়ে নালিশ করেন। সে সময় পোপের ক্ষমতার কথা সকলেরই জানা। পোপের তরফে নৈতিক শাসকদল বা ইনকুইজিশন নিয়োগ করা হল।
১৬১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্যালিলিওকে ইনকুইজিশন থেকে ডেকে পাঠানো হল। আদেশ দেওয়া হল যে, গ্যালিলিও তাঁর মত প্রচার করতে পারবেন না। তাদের নির্দেশ এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে নতমস্তকে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়।
১৬৩২ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিশ্বের প্রধান দু’টি নিয়ম সম্পর্কে কথোপকথন’ প্রকাশিত হল। এই গ্রন্থ প্রকাশের আগে তিনি পোপের থেকে অনুমতি চেয়েছিলেন। পোপ অনুমতি দিয়েছিলেন এই শর্তে যে, তাতে লিখতে হবে, তাঁর মতবাদ অনুমান মাত্র। গ্যালিলিওর বইটি প্রকাশিত হল। বইটিতে তিনটি চরিত্র ছিল। একজন তাঁর মতে বিশ্বাসী, দ্বিতীয়জন বিরোধী এবং তৃতীয়জন নিরপেক্ষ। দ্বিতীয় চরিত্রটিকে একটু বোকা বোকা ধরনের দেখানো হয়েছিল। অনেকে প্রচার করতে লাগলেন যে, দ্বিতীয় চরিত্রটি পোপকেই ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। ব্যস, জ্বলে উঠলেন পোপ। ১৬৩৩ সালে গ্যালিলিওকে রোমে ডেকে পাঠানো হল। শুরু হল বিচার। তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হল যে— ১৬১৬ সালের নির্দেশ লঙ্ঘন, বিনা অনুমতিতে পুস্তক প্রকাশ, ধর্ম বিরোধী মত প্রকাশের জন্য তাঁর বই বাজেয়াপ্ত করা হবে। অনির্দিষ্টকাল বন্দি থাকতে হবে।
গ্যালিলিও চুপ করে মাথা নিচু করে সব শুনলেন এবং আস্তে আস্তে মাটিতে পা ঠুকে বললেন, ‘তবুও পৃথিবী ঘুরবে।’ ১৬৪২ সালের ৮ জানুয়ারি এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। শেষ পাঁচ বছর তিনি অন্ধ হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। মৃত্যুর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি মেলে। তাঁর সমাধির উপর একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।