জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
যেতে হবে।
আবার দর্পনারায়ণের প্রপৌত্র উমানন্দন গান শুনতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি শুধু গান জানতেন না, সেতার বাজাতেও জানতেন। নিয়মিত গানের আসর বসত তাঁর বৈঠকখানায়। বসন্ত পঞ্চমীর দিন সেখানে বড় মাপের উৎসব হতো। আমের পল্লব আর হলুদ গাঁদাফুল দিয়ে সাজানো হতো গোটাবাড়ি। সেই স্মৃতিকথা রয়েছে চিত্রা দেবের ‘ঠাকুরবাড়ির বাহিরমহল’-এ। ফারেল সাহবের লেখাতেও মেলে এই উৎসবের কথা।
জয়রামের ছিল চার ছেলে। তাঁদের মধ্যে দু’জন— পাথুরিয়াঘাটার দর্পনারায়ণ ও জোড়াসাঁকোর নীলমণি। এই নীলমণির প্রপৌত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথের সময় থেকেই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে ব্রাহ্মধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকে। তিনি একসময় মূর্তিপুজোয় বিশ্বাস করলেও পরে রাজা রামমোহন রায়ের প্রভাবে নিরাকার ঈশ্বরের সাধনায় মন দেন। মহর্ষির নির্দেশেই জোড়াসাকোঁর বাড়ির সব অনুষ্ঠান ব্রাহ্ম রীতিনীতি মেনে অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। এপ্রসঙ্গে সৌদামিনী দেবীর ‘পিতৃস্মৃতি’ বইতে পাওয়া যায়— ‘একবার পিতা যখন সিমলা পাহাড় হইতে হঠাৎ বাড়ি ফিরিলেন, তখন বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পূজা। সেদিন বিসর্জন। তিনি বাড়িতে প্রবেশ না করিয়া ব্রাহ্মসমাজে গিয়া বসিয়া রহিলেন। বাড়ির সকলেই ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন; কোনো প্রকারে ঠাকুর বিসর্জন দেওয়া হইলে তিনি ঘরে আসিলেন। তাহার পর হইতে আমাদের বাড়িতে প্রতিমা পূজা উঠিয়া যাইতে লাগিল।’
১৮২৫ সালে কলকাতা শহরের দু’টি বড় সরস্বতী পুজোর খবর পাওয়া যায়। পটলডাঙার বাবু রূপনারায়ণ ঘোষালের বাড়ির পুজো। সেখানে সারারাত ধরে শখের কবিগান চলে। আড়াপুলি ও বাগবাজারের দলের ‘সজ্জা আর নৃত্য’ দেখে বাবুরা খুব খুশি হয়েছিলেন। বিপরীত ছবি ধরা পড়েছিল ধোবা পাড়ায় কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সরস্বতী পুজোয়। কিন্তু সেই সব ছাপিয়ে গিয়েছিল দ্বারকানাথ ঠাকুরের বাড়ির সরস্বতী পুজো। বিদ্যাদেবীর পুজোয় তখনকার দিনে খরচ হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ টাকা। সেবার কলকাতা শহরে সন্দেশ ও গাঁদাফুল দুর্লভ হয়ে গিয়েছিল। কারণ সবই এই পুজোর জন্য কিনে নেওয়া হয়েছিল। মণ্ডপটি তৈরি হয়েছিল গাঁদাফুল দিয়ে। বিশাল প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় নানা কৌশলে বাড়ি থেকে বের করতে হয়েছিল। সরস্বতী পুজোয় এত খরচ করা নিয়ে নাকি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন স্বয়ং দ্বারকানাথ।
১৮৫০ সালে দেবেন্দ্রনাথের জোড়াসাঁকোর ৬ নম্বর বাড়ি থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো উঠে যায়। পরবর্তীকালে ১৮৫৯ সাল থেকে এই বাড়িতে দুর্গাপুজোও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, জোড়াসাঁকোর অপর বাড়ি অর্থাৎ দেবেন্দ্রনাথের ভাই গিরীন্দ্রনাথের ৫ নম্বর (বৈঠকখানা) বাড়িতে তারপরও হিন্দু পৌত্তলিক আচার ব্যবস্থা চালু ছিল।