সপরিবারে নিকট ভ্রমণের পরিকল্পনা। সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে শত্রুতা করতে পারে। নতুন কোনও কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মক্ষেত্রে বদলির ... বিশদ
গ্ল্যাডিয়েটর’ শব্দটির সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। লাতিন শব্দ ‘গ্ল্যাডিয়াস’ থেকে এসেছে কথাটি। এর অর্থ হল ‘তরবারিওয়ালা মানুষ’। যে অস্ত্রধারী যোদ্ধারা অন্য অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করে সাধারণ মানুষ ও রাজাদের আনন্দ দেন, তাঁদেরই গ্ল্যাডিয়েটর বলা হতো।
রোমান সাম্রাজ্যে গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই বেশি দেখা যেত। গ্ল্যাডিয়েটরদের অনেক সময়ই দাগী আসামি কিংবা হিংস্র বন্যপ্রাণীদের সঙ্গেও লড়াই করতে হতো। এর মধ্যে আবার কয়েকজন গ্ল্যাডিয়েটর ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী। যাঁরা নিজের ইচ্ছাতেই জীবন বিপন্ন করার এই হিংস্র খেলায় অংশ নিতেন। তবে, বেশিরভাগ গ্ল্যাডিয়েটরই ছিলেন ক্রীতদাস। দাসত্বের কারণেই তাঁদের এরকম জীবন বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায়ও থাকত না। গ্ল্যাডিয়েটররা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করত ঠিকই। তবে তাঁদের প্রাচীন রোমে বীরের মর্যাদা দেওয়া হতো। আর তাদের জনপ্রিয়তাও ছিল আকাশছোঁয়া।
গ্ল্যাডিয়েটরদের নাম করলেই প্রথমে যে নামটি মনে আসে, সেটি হল স্পার্টাকাস। তাঁর জীবনকাহিনি শুনলে অবাক হতে হয়। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে কেটেছে স্পার্টাকাসের প্রথম জীবন। ছিলেন সাধারণ সৈনিক। পরে বন্দি হয়ে শেষ পর্যন্ত দাসত্ব বরণ করতে হয়েছিল। আর সেই দাসত্ব থেকেই জন্ম হয় গ্ল্যাডিয়েটর স্পার্টাকাসের।
তিনি ছিলেন একজন থ্রাসিয়ান সৈনিক। তাঁকে রোমানরা বন্দি করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। লেনটুলোস বাটাইটাস নামের এক ব্যক্তি সেই সময়ে ক্যাপুয়া নামের একটি গ্ল্যাডিয়েটর স্কুল পরিচালনা করতেন। তিনিই সর্বপ্রথম স্পার্টাকাসের ভেতর একজন গ্ল্যাডিয়েটর হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পান। পাকা জহুরি ছিলেন বাটাইটাস। তিনি স্পার্টাকাসকে গ্ল্যাডিয়েটর করার জন্য চড়া দামে কিনে নিলেন। শুরু হল সৈনিক স্পার্টাকাসের নতুন জীবন। বাটাইটাসের স্কুলে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন গ্ল্যাডিয়েটর হওয়ার সম্পূর্ণ শিক্ষালাভ করলেন। পরের ঘটনা কেবলই ইতিহাস। ক্রমে ক্রমে স্পার্টাকাস একজন বিখ্যাত গ্ল্যাডিয়েটর হয়ে ওঠেন এবং অনেক যুদ্ধ জয় করেন। কথা ছিল বাটাইটাস একটা সময়ের পর তাঁকে স্বাধীনতা দেবেন। কিন্তু প্রতারণার শিকার হন স্পার্টাকাস। ৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্পার্টাকাস তাঁর ৭০ জন গ্ল্যাডিয়েটর সঙ্গীকে পাশে নিয়ে বাটাইটাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই দাস-বিদ্রোহে বাটাইটাস খুন হন। আর ওই সময় অনেক ক্রীতদাস মুক্ত হয়ে যান। যার ফলে একটি বড় ও শক্তিশালী বাহিনীর সৃষ্টি হয়। অচিরেই তারা ৭০ হাজার দাসের একটি বাহিনীতে পরিণত হয়।
জানা যায়, ৭২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পুরো শীতকাল জুড়ে গ্ল্যাডিয়েটর ও দাসরা বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়। তারপর শুরু হয় প্রাণঘাতী যুদ্ধ। রোমান বাহিনী ও গ্ল্যাডিয়েটরদের মধ্যে এই যুদ্ধ ‘তৃতীয় সারভিল ওয়ার’ হিসেবে ইতিহাস খ্যাত। স্পার্টাকাসকে হত্যার জন্য বিশাল বাহিনী পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু গ্ল্যাডিয়েটররা তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহজেই তাদের হারিয়ে দেন। ৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারকুস ক্রেসুস ৫০ হাজার প্রশিক্ষিত রোমান সৈন্য নিয়ে স্পার্টাকাসের
বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। ক্রেসুস দক্ষিণ ইতালিতে স্পার্টাকাসকে বন্দি করেন। শেষ পর্যন্ত বন্দি অবস্থায় স্পার্টাকাসকে হত্যা করা হয়। তাঁর অনুগামী ছয় হাজার যোদ্ধাকে বন্দি করা হয় এবং পরে তাঁদের ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। শুনলেও অবাক লাগে সেইসব মৃতদেহ দিয়ে কেপুয়া থেকে রোম পর্যন্ত রাস্তার ধারে লাইন তৈরি করা হয়েছিল।
সিরিয়ার ক্রীতদাস ছিলেন ফ্ল্যামমা। কিন্তু ইতিহাসে তাঁর খ্যাতি একজন বীরযোদ্ধা হিসেবেই। মাত্র ৩০ বছর বয়সে ফ্ল্যামমা মারা যান। কিন্তু এই অল্প বয়সেই তিনি অসাধারণ সব রেকর্ড তৈরি করেন। তিনি মোট ৩৪টি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তারমধ্যে ২১টিতে জয়লাভ করেন। ৯টি ড্র হয় এবং মাত্র ৪টিতে পরাজিত হয়েছিলেন।
এই ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি চারবার রুডিস লাভ করেন। যখন একজন গ্ল্যাডিয়েটরকে রুডিস দেওয়া হয়, তার অর্থ সেই গ্ল্যাডিয়েটর আর কারও ক্রীতদাস নয়। সে অন্যান্য রোমানবাসীর মতোই বাকি জীবন কাটাতে পারবে। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা, ফ্ল্যামমা এই রুডিস নিতে অস্বীকার করেন। এর ফলে আজীবন একজন গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবেই যুদ্ধ করে গিয়েছেন।
মারকুস এটিলাসের গল্প একটু অন্যরকম। তিনি ছিলেন জন্মসূত্রে রোমান নাগরিক। ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন এটিলাস। ঋণমুক্ত হতেই নিজেকে গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। সম্রাট নিরোর গ্ল্যাডিয়েটরকেও পরাজিত করেছিলেন এটিলাস।
প্রথম শতাব্দীর আরও একজন গ্ল্যাডিয়েটরের নাম স্পিকুলাস। তিনি নিষ্ঠুর শাসক নিরোর খুব পছন্দের লোক ছিলেন বলে জানা যায়। নিরো যখন ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন তিনি অনেক সন্ধান করেও স্পিকুলাসকে খুঁজে পাননি। কার্পোফটোস ছিলেন অন্যান্য গ্ল্যাডিয়েটরদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অন্য গ্ল্যাডিয়েটরদের মতো তিনি গ্ল্যাডিয়েটরদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেন না। লড়াই করতেন বাঘ, সিংহ, চিতা, ভালুকের মতো বন্য জন্তুর সঙ্গে। একটা মাত্র বর্শা হাতে গণ্ডারের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পরাজিত হন। ইতিহাসে বিখ্যাত গ্ল্যাডিয়েটরদের মধ্যে নারীও ছিলেন। মেভিয়া তেমনই একজন বিখ্যাত নারী গ্ল্যাডিয়েটর।