কর্ম বা গৃহক্ষেত্রে অশান্তি মনঃকষ্ট হতে পারে। পেশাদারী কর্মে সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
আমরা যারা দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘লালকমল-নীলকমল’ কিংবা ‘কিরণ্মালা’র সঙ্গে হরদম অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়ি শীতের সকালে কিংবা গরমের ছুটির দুপুরগুলোয়, তারাই আবার একটু ভিন্ন স্বাদ পেতে হাতে তুলে নিই আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ, বন্ধুত্ব করে ফেলি বরফের দেশের ওলাফ, এলসা অথবা রাপুনজেলের সঙ্গে। শুধুই কি আমরা একা! ছোটদের মিকি, মিনি মাউস, গুফিকে নিয়ে বেড়ে ওঠা অথবা হাই স্কুল-কলেজের দাদাদিদিদের ‘মারভেল অ্যাভেঞ্জারস’ নিয়ে উচ্ছ্বাস তো আমাদের কারওরই অজানা নয়। কথায় বলে শিশুমনের কোনও বয়স হয় না। আর সেই শিশুমনটিকে পুষ্ট করতে চলে যাওয়া যেতেই পারে পাশ্চাত্যের অধিকাংশ রূপকথার পীঠস্থান ‘ডিজনিল্যান্ড প্যারিসে’।
সারা পৃথিবীতে কিন্তু একাধিক ডিজনিল্যান্ড আছে। ইউরোপের পার্কটি ডিজনি বানিয়েছেন লক্ষাধিক পর্যটকদের প্রিয় তীর্থস্থান প্যারিসে। এই পার্কটি সুন্দরভাবে ঘুরে দেখতে সময় লাগবে দু’দিন। হাতে যদি সময় না থাকে তবে একদিনই সই! বিশাল চত্বরের একদিকে রয়েছে ডিজনি পার্ক আর অন্যদিকে ডিজনি স্টুডিও। এমনকী, রাতে থাকার জন্য আছে ডিজনি ভিলেজ, যেখানে ইচ্ছেমতো থিমের ঘর বেছে নিতে পারবে ডিজনি ফ্যানেরা। পার্কে প্রবেশ করার পর থেকে আশপাশের সবকিছুই কিন্তু বদলে যাবে— দোকান, খাবার, রাস্তা সবকিছুতেই মিকি বা মিনি মাউসের হাসিমুখ ভালো করে দেবে মন। ডিজনি পার্কে রয়েছে বিশাল বড় ফ্যান্টাসিল্যান্ড। সেখানে সিন্ডারেলার সঙ্গে হাত মেলাতে যেতে না যেতেই পাশের অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড থেকে ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর ডাক আসবে। তবে মনে রাখতে হবে ডিজনিল্যান্ডের ভিতর সব রাইড ফ্রি, শুধু লাইনে দাঁড়িয়ে চড়ার অপেক্ষা, তাই আগে থেকে ঝাড়াই-বাছাই না করে গেলে কিন্তু বিপদ, কোনটা ছেড়ে কোন রাইডে যাবে ভাবতে ভাবতেই সময় চলে যাবে। তবে কোনওভাবেই অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ডের ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ বা ‘পিটার প্যান্স ফ্লাইট’ মিস করা মানে ষোলোভাগের চারভাগ মজাই নষ্ট। তবে শুধুই তো রাইড নয় পথে থাকবে আমাদের সকলের প্রিয় চরিত্র মিকি, মিনি, গুফি, আলাদিন, সিন্ডারেলা, এলসা, ডার্থ ভেদার -ওদেরকে জড়িয়ে ধরা বা ওদের সঙ্গে ছবি তোলার ইচ্ছা পূরণ হবেই হবে।
এই ডিজনি পার্কে আরও একটা রাইড আছে যা মিস করাই যাবে না। ‘ইটস আ স্মল ওয়ার্ল্ড’ নামের এই রাইডটি আসলে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, পোশাক এবং আদবকায়দার সঙ্গে পরিচিত করাবে তোমাদের। তবে চমকে উঠবে যখন রাইডের শুরুতেই দেখবে ঝকঝকে বাংলা ভাষায় লেখা রয়েছে ‘স্বাগতম’। আরও দেখতে পাবে আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। একইভাবে রাইড শেষ হওয়ার মুখে ‘বিদায়’ লেখাটিও নজর কাড়বে। ভাব তো পাশ্চাত্যের রূপকথার কুঠুরিতেও পৌঁছে গিয়েছে আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষা। ভাবলেই কী ভীষণ আনন্দ হয়। তাই না!
এত রাইড চড়লে আর পরিশ্রম করলে খিদে পাওয়া তো খুব স্বাভাবিক। ছোট ছোট হরেক খাবারের দোকান রয়েছে গোটা ডিজনিল্যান্ডেই। যা খেতে ইচ্ছে করবে সেইমতো দোকান খুঁজে ঢুকে পড়লেই হল। শুধু খেয়াল রাখতে হবে বিকেলের রোড শো-এর আগেই কিন্তু বেরিয়ে আসা চাই। ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে ডিজনির বিখ্যাত কিছু চরিত্র নেমে আসে পথে, নানান নাচ-গান-আনন্দ-হুল্লোড়ের মাঝে তারা স্বাগত জানায় রাতকে। অন্ধকার নামলেই গুটিগুটি পায় চলে যাওয়া যায় ডিজনি স্টুডিওর দিকে। সেখানে সবথেকে ভয়ংকর রাইড ‘দ্য হন্টেড ম্যানসন’ পেরিয়ে অ্যাভেঞ্জার বেস-এ এসে পৌঁছলে স্পাইডারম্যান ডেকে নেয় তার ওয়েব-রাইডে। ইচ্ছে হলে মা-বাবার কাছে বায়না করেই এখান থেকে কিনে নেওয়া যায় প্রিয় ক্যাপ্টেন আমেরিকা বা মিস মার্ভেলের পুতুল। এবার যে একটু জিরোবে তার উপায় কই! শুরু হবে ডিজনি পার্কের রাতের ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’। তাই ন’টার আগেই ঢুকে যেতে হবে সেখানে, নিয়ে নিতে হবে পছন্দ মতো জায়গা।
ফেরার পথে মনে পড়বে ওয়াকান্ডা, সিম্বা, অ্যারিয়েল, স্টার ওয়ার্সের আরটু ডিটুর কথা। তবে সব ভালো যার শেষ ভালো, তাই একটা শেষ কথা শেয়ার করে যাই— ডিজনিল্যান্ড প্যারিস শহরের বাইরে অন্য একটা ছোট্ট টাউনে। সেখানে ট্রেনে করে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। আগে ওখানে যাওয়ার সরাসরি কোনও ট্রেন ছিল না। শুধু ছিল ডিজনির নিজস্ব বাস। ডিজনি পরে নিজের টাকায় স্পেশাল এই প্ল্যাটফর্মটি বানিয়ে ট্রেনের লাইন তৈরি করে দেয়। আর সেই স্টেশনই এই লাইনের শেষ স্টেশন। যার নাম এই ছোট্ট শহরের নামে। কিন্তু যেটিকে লোকে আদতে চেনে ডিজনিল্যান্ড ট্রেন স্টেশন বলে। এ যেন ঠিক হ্যারি পটারের স্পেশাল ট্রেনের মতো, স্বপ্নের জগতে পৌঁছে দেওয়ার এক এবং অদ্বিতীয় উপায়।