উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
ভোর হচ্ছে সবে। ছায়ামাখা আবছা আলো এসে মিশছে সমুদ্রের গায়ে। বঙ্গোপসাগর বেয়ে বয়ে আসছে নোনা হাওয়া। একেবারেই নিরিবিলি অনাঘ্রাতা সৈকত, সোনালি বালুকাবেলা। ওড়িশা ভ্রমণের নবতম সংযোজন ‘গোল্ডেন বিচ’ বা ‘ব্লু ফ্ল্যাগ বিচ’।
এবার পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলাম এই সাগরসৈকত। আমরা এমন বালুকাবেলা দেখে উল্লসিত হই। মনে হয় সাগরের তরঙ্গ তোলা বিপুল জলরাশির পরেই বুঝি পৃথিবীও তার সীমান্তরেখা টেনে দিয়েছে। যেদিকে চেয়ে রয়েছি, তার সামনে কোনও সীমা নেই। বাঙালির চিরকালীন ভালোবাসার সেই পুরী। এবার অনাবিল নির্জনতায় ভরা হোটেল গোল্ডেন ট্রি আমাদের ঠিকানা।
পুরী সৈকত থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে গোল্ডেন বিচ বা ব্লু ফ্ল্যাগ বিচ। পুরীর রাজভবনের কাছেই। স্বর্গদ্বার থেকেই টোটো বা অটো ভাড়া করে চলে আসা যায়। ভাড়া দূরত্ব অনুযায়ী ১০০-২০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। স্টেশন থেকে এলে ভিআইপি রোডের কাছেই এই সমুদ্র সৈকত। নেতাজি মূর্তির বাঁদিকের রাস্তা। আবার স্বর্গদ্বার থেকে এলে নেতাজি মূর্তির ডানদিকের রাস্তা ধরেই এই সৈকতে পৌঁছনো যায়।
গোল্ডেন বিচে প্রবেশের আগেই ডানদিকে কয়েক পা ঢুকে টিকিট বিক্রয় কেন্দ্র। এখানে তিন ধরনের প্রবেশমূল্য রয়েছে। ডলফিন টিকিটের দাম ২০ টাকা জনপ্রতি (৩ ঘণ্টার জন্য)। স্প্যাশ টিকিট পাবেন ৫০ টাকা জনপ্রতি, স্নানের জন্য। শেল টিকিটের দাম ১০০ টাকা জনপ্রতি, সারাদিনের জন্য। এবং অয়েস্টার টিকিটের দাম ৩০০ টাকা মাসিক ৩ ঘণ্টার জন্য প্রতিদিন। আর যারা এই গোল্ডেন ট্রি হোটেলে থাকবেন, তাঁদের জন্য সৈকত ভ্রমণে নির্দিষ্ট কুপনের বিনিময়ে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে।
গোল্ডেন বিচ প্রবেশ তোরণে ঢুকেই দু’দিকে দু’টি বেলেপাথরের কারুকাজ করা ম্যুরাল। সামনে হরেক মরশুমি ফুলের টব সাজানো। সাগরের কাছ বরাবর হাঁটার জন্য রবারের মোটা মাদুর বিছানো। তারপরই মোটা দড়ি দিয়ে সাগরজলে নামার সীমানা চিহ্নিত করা রয়েছে। ‘লাইফ সেভার গার্ড’ সারাক্ষণ সতর্কতামূলক নজরদারি রাখছেন। ঝকঝকে তকতকে সাগরবেলা। কোথাও এতটুকু আবর্জনা নেই। খানিক দূরে দুরেই আবর্জনা ফেলার পাত্র রাখা। এই সৈকত সম্পূর্ণরূপে প্লাস্টিক বর্জিত। কোনও ক্যাফে বা অন্য খাবারদাবারের স্টল নেই এই সৈকতে। তবে এর প্রবেশদ্বারের পাশে একটি সুগঠিত ক্যাফে রয়েছে। পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতা তাই অটুট রয়েছে। আর মিনিট দশেকের দূরত্বেই তো পুরীর মেরিন বিচ। সেখানে নানা খাবারের দোকান।
২০২০ সালের অক্টোবর মাসের ১১ তারিখ এই গোল্ডেন বিচ সৈকতটি ডেনমার্কের ‘ফাউন্ডেশন ফর এনভারনমেন্টাল এডুকেশন’ (এফইই) থেকে ‘ব্লু ফ্ল্যাগ বিচ’ তকমা পেয়েছে। আমাদের দেশের মোট দশটি ব্লু ফ্ল্যাগ বিচের মধ্যে পুরীর গোল্ডেন বিচ একটি। ৮৭০ মিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে জগার্স ট্র্যাক, ফিটনেস সেন্টার, উন্নতমানের প্রসাধন কক্ষ, পোশাক পরিবর্তনের জন্য কিউবিকলস, পরিশোধিত পানীয় জল, সোলার পাওয়ার প্লেট, লাইফ গার্ড নিরীক্ষণ কেন্দ্র, ছোটদের পার্ক ও কিছু খেলাধুলোর সরঞ্জাম, হ্যামক, ছাউনি ঘেরা বসার বেঞ্চ, অগুনতি নীলরঙা কাঠের বসার জায়গা।
গোল্ডেন বিচের এই বিজন সৈকতে পা বাড়ালেই সোনালি বালুরাশি আর অথই সমুদ্র। ঢেউ ভাঙার মৃদু শব্দ, সোনালি বালির বুকে সফেদ ঊর্মিমালার আঁকিবুকি খেলা। এখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য অপরূপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখার এক মনোরম সুযোগ পেলাম এই সৈকত থেকে। মনে থেকে যায় সেই অপরূপ শোভা।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে পুরীগামী ট্রেনে পুরী স্টেশনে নামুন। সেখান থেকে অটো বা টোটোতে সরাসরি গোল্ডেন বিচে পৌঁছে যাওয়া যায়।