উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
দুর্গাপুজো দিয়ে বাঙালির যে উৎসবের মরশুম শুরু হয়, তা শীত পেরিয়ে বসন্ত পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। এই সময় আমরা কাছে-দূরে বেড়াতে যাই! শীতের বেড়ানোর গন্তব্য নিশ্চয়ই ইতিমধ্যেই রেডি। এবার ধীরেসুস্থে ব্যাগ গোছানোর পালা। শেষ মুহূর্তের জন্য প্রায় সবাই এই কাজটা ফেলে রেখে দেন। আর তারপর তাড়াহুড়োয় বাদ পড়ে যায় অনেক জরুরি জিনিসপত্র। তার চেয়ে বরং ব্যাগ গোছানোর রুলবুক তৈরি করে নিন আগে থেকেই। কয়েকটা টিপস দিয়ে দিই আপনাদের।
তালিকা তৈরি
প্রয়োজনীয় জিনিসের একটা তালিকা তৈরি করে নিন। ব্যাগ গোছানোর সময় সেই তালিকা দেখে মিলিয়ে জিনিস ভরুন ব্যাগে। তাহলে জরুরি জিনিস ভুলে যাওয়ার শঙ্কা কম থাকে। সেই তালিকায় থাক পোশাক, ক্যামেরা, ওষুধ, টাকা ও কার্ড, পরিচয়পত্র, প্রসাধনী ও টুকটাক সাজগোজের জিনিসপত্র। তালিকাটি হাতে থাকলে গোছানোর সময় কিছু বাদ যাচ্ছে কি না তা বুঝতে সুবিধে হবে।
পোশাক বাছাই
পোশাক বাছাই অবশ্যই নির্ভর করে গন্তব্যের উপর। ধরুন আপনি শীতের জায়গায় যাচ্ছেন, তারও কিন্তু কয়েকটি ভাগ আছে। সেই অনুযায়ী ব্যাগে পোশাকের কিছু তারতম্য ঘটবে বইকি! শৈলশহরে বেড়াতে গেলে কোন সময় যাচ্ছেন সেই মতো ভারী বা হাল্কা শীতপোশাক নিন। সোয়েটার, উলের টপ, উলের কুর্তা, উলের টুপি ও মোজা অবশ্যই নেবেন। কিন্তু কড়া শীতের বরফে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়াতে যেতে চাইলে পোশাকের ক্ষেত্রে একটু অতিরিক্ত সচেতন হওয়া জরুরি। এখানে সোয়েটার ছাড়াও ভারী জ্যাকেট নেওয়া উচিত। বডি ওয়ার্মার, ওয়ার্ম ইনার জাতীয় জিনিস অবশ্যই নেবেন। তার সঙ্গে কিছু সুতির টপও নেবেন। কড়া শীত আটকাতে পোশাকের বিভিন্ন স্তর থাকা দরকার। প্রথমে ওয়ার্ম ইনার বা বডি ওয়ার্মার পরে, তার উপর একটা সুতির টপ চাপিয়ে নিন। তার উপর সোয়েটার বা ফ্লিস টপ পরে তবেই পরুন জ্যাকেট। সোয়েটারের বদলে উলের টপ বা কুর্তিও পরতে পারেন। আবার সমুদ্রের তটে বেড়াতে যাওয়ার সময় সুতির পোশাক নেবেন। ট্রাউজারের ক্ষেত্রে শর্টস নিন। শর্ট বা মিডি ড্রেস নিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সুতির টুপি, ক্যাপ বা হ্যাট নেবেন অবশ্যই। স্কার্ট টপ নিতে পারেন। স্লিভলেস টপ, ড্রেস বা টপ নিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় জিনিস
বেড়াতে গেলে পরিচয়পত্র নেওয়া আবশ্যিক। একটা অর্গানাইজার সঙ্গে রাখুন। তাতে নানা পকেট, ফ্ল্যাপ ইত্যাদি থাকে। তার মধ্যে খুব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিন। সেই তালিকায় থাকবে সচিত্র পরিচয়পত্র (আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি), ব্যাঙ্কের কার্ড (ক্রেডিট ও ডেবিট), টাকা, ট্রেন বা প্লেনের টিকিটের প্রিন্ট আউট। যদিও আজকাল ফোনের মাধ্যমে সবই দেখানো সম্ভব। তবু হাতে কাগজগুলোও রাখুন। হঠাৎ ফোন যদি বিকল হয়, চার্জ ফুরিয়ে যায় তাহলে হার্ড কপি থাকলে সমস্যায় পড়বেন না। হোটেল বা রিসর্টের বুকিং সংক্রান্ত কাগজও সঙ্গে রাখুন। অনলাইন বুকিং থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে বুকিংয়ের কাগজ দেখানোর প্রয়োজন পড়ে।
চার্জার ও অন্যান্য
মোবাইল এখন আমাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী। এছাড়াও অনেকেই বেড়ানোর সময়ও ল্যাপটপ, ব্লুটুথ ইয়ারপড, ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে যেতে অভ্যস্ত। ভ্রমণের অবসরে গান শোনা কিংবা ছবি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে প্রতিটি জিনিসের উপযুক্ত চার্জার অবশ্যই নেবেন। একটা পাওয়ার ব্যাঙ্কও সঙ্গে রাখবেন। বিদেশ ভ্রমণে একটা চার্জিং অ্যাডাপ্টার নিয়ে নিন সঙ্গে। আজকাল অনেক ক্ষেত্রে হয়তো তা লাগে না, তবু ছোট্ট জিনিস সঙ্গে রাখতে ক্ষতি কী? অনেকেই চার্জিং কেবলটুকু শুধু নিয়ে যান। কিন্তু একটা চার্জিং হেড নেওয়া বিশেষ জরুরি। নইলে ইউএসবি পোর্ট কাজ না করলে বিপদে পড়তে হবে।
ক্যামেরার সাজগোজ
বেড়াতে গিয়ে ছবি তোলেন না এমন লোক কমই আছেন। অনেকেই ভালো ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল দিয়েই ছবি তোলার কাজটা সেরে ফেলেন। আবার কেউ হয়তো বিশেষ শখে ক্যামেরা নিয়ে যান নানা ধরনের লেন্স-সহ। সেক্ষেত্রে ক্যামেরার চার্জার যেন মিস না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। তাছাড়াও লেন্স ক্লিনিং ব্রাশ ও সলিউশনও নেবেন প্রয়োজন অনুযায়ী। অতিরিক্ত মেমোরি কার্ড সঙ্গে রাখবেন।
প্রসাধনী ও টুকিটাকি
সমুদ্রে যান বা পাহাড়, সানস্ক্রিন লোশন সর্বত্রই লাগবে। অতিরিক্ত উচ্চতায় গেলে ৭০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন রোলঅন বা স্প্রে সবই পাবেন। আজকাল তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিশেষ সানস্ক্রিনও পাওয়া যায়, দেখে সঠিকটা নির্বাচন করবেন। অয়েল বেসড সানস্ক্রিনে যদি অসুবিধে হয় তাহলে ওয়াটার বেসড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ময়েশ্চারাইজিং লোশন, ফেস ওয়াশ, নাইট ক্রিম, হ্যান্ড ক্রিম, ভালো কোনও ক্লেনজার ইত্যাদিও সঙ্গে রাখুন। নিজের পছন্দের লিপস্টিক ছাড়াও লিপ বাম অবশ্যই রাখবেন। কাজল, মাসকারা যদি ব্যবহার করার অভ্যাস থাকে তাহলে তাও সঙ্গে নিন।
আর আছে চুল বাঁধার নানারকম ক্লিপ, ব্যান্ড ইত্যাদি। পুরুষদের দাড়ি কামানোর সরঞ্জাম যেন বাদ না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখুন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জাঙ্ক জুয়েলারিও নেবেন। চশমার কেস, সানগ্লাস নিতে ভুলবেন না। জুতো যেন ভালো হয়। এমন জুতো নেবেন না যা পরে আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। পায়ের আরাম চলার গতি বাড়ায়।
ওষুধপত্র
নিজের রোজকার খাওয়ার ওষুধ হিসেব করে নিতে পারলে তো খুবই ভালো। নাহলে স্ট্রিপ ধরে নিয়ে চলুন। এছাড়াও যে ওষুধগুলো অবশ্যই নেবেন তার মধ্যে জ্বর, ব্যথা, পেটের গন্ডগোলের ওষুধ অবশ্যই রাখা দরকার। সঙ্গে একটা ব্যথা কমানোর স্প্রে রাখুন। হঠাৎ চোট পেলে কাজে লাগবে। অ্যান্টিসেপটিক কোনও মলমও সঙ্গে রাখুন। আর একটা ক্রেপ ব্যান্ডেজ ও খানিকটা তুলো।
বাড়তি কিছু
কয়েকটা জিনিস রয়েছে যা খুব প্রয়োজনীয় না হলেও পথ চলতে সঙ্গে থাকলে মন্দ হয় না। তার মধ্যে একটু মুখশুদ্ধি, ওয়েট টিস্যু, পেপার ন্যাপকিন, কাগজের প্লেট, ডিসপোজেবল চামচ, ট্রাভেল পিলো, বাদাম, চকোলেট, লজেন্স ইত্যাদি রয়েছে।
ব্যস, ব্যাগ গোছানো শেষ। এবার দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়ুন!