কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
কিন্তু ২০২১ সালের নির্বাচনে কঠিন লড়াইয়ে নেমে তৃণমূল কংগ্রেস আবার নতুন করে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বামপন্থী দলগুলিকে কাছে পেতে উদ্যোগী হয়েছে। তাদের এই উদ্যোগে সহায়তার ভূমিকায় নিয়োজিত হয়েছেন ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর। রাজ্য-রাজনীতিতে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে বিজেপি। বিজেপিকে ঠেকাতে উদার বাম-মনস্ক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই বিজেপির বিরোধিতায় এবং তৃণমূলের সমর্থনে মুখ খুলেছেন। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে বৃহত্তর ভাবনার উদার ও বামপন্থী মানুষের সমর্থন যেমন তৃণমূলের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে, তেমনি তৃণমূল কংগ্রেসও উদার বাম-মনস্ক মানুষদেরকে তাদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেবে। এ এক সহজ অনুমান।
রাজ্যের ছোট ছোট দলগুলির সমর্থনে তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তন এনেছিল।
ক্ষমতায় আসার পর এই ছোট দলগুলি তৃণমূলের রাজনীতির বাইরে চলে যায়। মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ঝাড়খণ্ড পার্টির সঙ্গে কি তৃণমূলের নতুন সমঝোতা হতে পারে? কুর্মিদের আদিবাসী হিসেবে মর্যাদার দাবিকে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহলের রাজনীতি সরগরম। এখন দেখার আদিবাসীদের রাজনীতিকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মতো আঞ্চলিক একটি দলকে নির্বাচনী রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করে কি না।
২০১৯-র লোকভা নির্বাচনে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছিল। ২০২১-র নির্বাচনের আগেই বিমল গুরুংকে তৃণমূল সঙ্গে পেয়েছে। পাহাড় ও ডুয়ার্স মিলে ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলে এর প্রভাব পড়তে পারে। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কোচবিহারের কামতাপুর পিপলস পার্টির জেলবন্দি নেতা বংশীবদনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কামতাপুর পিপলস পার্টির সমর্থন ২০১১-র নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ছিল। এবারও কামতাপুর পিপলস পার্টি ও তার বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলির সমর্থন তৃণমূলের পক্ষে যায় কি না তা দেখার। একসময় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর পিডিসিআইয়ের মতো দল বামেদের বিরোধিতা করে তৃণমূলের পক্ষে ছিল। পরে সিদ্দিকুল্লা সাহেবকে তৃণমূল কংগ্রেসে অন্তর্ভুক্ত করে বৃহত্তর মুসলিম সমাজের সমর্থন তৃণমূল কংগ্রেস নিশ্চিত করেছিল। এবার ফুরফুরা শরিফের পীর ত্বহা সিদ্দিকিকে তৃণমূল তাদের নিজেদের দিকে নিতে সক্ষম হয়েছে। ত্বহা সিদ্দিকি তৃণমূলের হয়ে প্রচারও করেছেন। যদিও ফুরফুরা শরিফের আর এক পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নতুন দল গঠন করেছেন। তিনি এই নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে নামছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনীতিতে মতুয়াদের যোগদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ঠাকুরনগরের বীণাপাণি দেবীর পরিবার আজ কার্যত তৃণমূল ও বিজেপি দুই শিবিরে বিভক্ত। মমতাবালা ঠাকুর তৃণমূলের মতুয়া মুখ হলে বিজেপির মতুয়া মুখ শান্তনু ঠাকুর। নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়াকে কেন্দ্র করে শান্তনুর মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে, যা তিনি বারবার প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব শান্তনুকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার আহ্বান জানিয়ে রেখেছে। মতুয়াদের সমর্থন পেতে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার মতুয়া উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছে। এখন দেখার মমতার অন্তর্ভুক্তিকরণের রাজনীতি এক্ষেত্রে কতটুকু সফল হয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সাফল্য এক বিরাট অংশের মানুষকে নতুন করে সরকারের কাছে এনেছে।
পরিবর্তনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্তর্ভুক্তিকরণের রাজনীতি পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছিল। ২০১৬ সালেও মমতার অন্তর্ভুক্তিকরণের রাজনীতি ফলদায়ী হয়েছিল। এবারও সমাজের নানা বর্গের মানুষকে সঙ্গে নেওয়ার প্রবণতা যেমন লক্ষ করা যাচ্ছে, তেমনি ২০২১-র নির্বাচনী বৈতরণী পেরনোর জন্য রাজ্যের ছোট রাজনৈতিক দলগুলিকে কাছে পেতে চাইছে তৃণমূল।
অন্যদিকে, তৃণমূল থেকে বিযুক্ত হওয়ার ধারাও যথেষ্ট প্রবল। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকে একের পর এক নেতা-কর্মী দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। ২০২১-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে একাধিক বিধায়ক, সাংসদ, কাউন্সিলার, পঞ্চায়েত সদস্য দল থেকে বিযুক্ত হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যে অন্তর্ভুক্তিকরণের রাজনীতি বারবার তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচন বৈতরণী পেরনোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল, এবার কি তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হল? প্রার্থী ঘোষণাসহ ভোটের অনেক কৌশল এখনও লুকিয়ে রেখেছে সব দল। তাই উত্তরটা এখনই জানা যাবে না। এর নিশ্চিত উত্তর পেতে আমাদের ভোট মেটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।