পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
তাই একদিন ছেলেকে ডেকে বলল শেঠ, — ‘বাবা, আমার তো পরকালের ডাক এসেছে, কবে যে চলে যেতে হয়; তাই তোমাকে কয়েকটা কথা বলে যাচ্ছি। দেখ বাবা, প্রথমতঃ আমার এই যে সম্পত্তি, এ সব তো এখনই তোমারই। তাকে উড়িয়ে দিও না। বুঝে সুজে প্রয়োজনে খরচা করবে। আর দ্বিতীয়তঃ ঐ যে কালো আলমারীটা আছে, ওটা সহজে খুলো না। যদি কখনো এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে আর কোনো সহায় সম্বলই খুঁজে পাচ্ছ না, তবেই তেমনি হলেই ওটী খুলবে। কেমন মনে রেখো কিন্তু।’
তারপর একদিন শেঠের মৃত্যু ঘটল।
ঘটা করে তার শ্রাদ্ধ শান্তি করল ছেলে। ধীরে ধীরে ছেলে বিবাহ আদি করে সুখে থাকতে লাগল।
ছেলেটি ছিল কিন্তু খুব হাত খোলা। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে দুই হাতে পয়সা খরচা করতে লাগল। দশ পয়সার প্রয়োজনে সে দশ টাকা খরচা করে বসে। এমনি তার স্বভাব।
কাজেই, এরকম হলে যত সম্পত্তিই থাকুক তা আর ক’দিন চলে। দেখতে দেখতে শেঠের সব ধন-রত্ন, টাকা-কড়ি নিঃশেষ হয়ে গেলো। ওদের অবস্থা প্রায় পথের ভিখারীর অবস্থা হয়ে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে ওদের খাওয়া পরাও না জোটার অবস্থা।
এমনি যখন পরিস্থিতি, তখন ছেলের মনে পড়ল কালো আলমারীটার কথা। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল আবার সতর্কবাণী — ‘একান্ত অপারগ না হলে ওটা খুলবে না।’
মনে মনে ছেলেটী বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে উঠল। সে ভাবল, — বাবা আমার ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা পুরুষ ছিলেন। তিনি জানতেন, আমাদের এ রকম দিন আসবে। তাই এই আলমারীতে না জানি কত মণিমানিক্য, টাকা পয়সা পৃথক করে রেখে গিয়েছেন। আমার কাছে দিয়ে গেলে আজ তো আমি কী দূরবস্থায়ই না পড়তাম। ভক্তি ভরে বাবাকে সে মনে মনেই প্রণাম করল।
যাক্, অনেক কষ্ট করে, অনেক চেষ্টার পর সে আলমারী তো খোলা হ’ল। কিন্তু একি, এ যে একেবারে খালি। এক কপর্দকও যে তার মধ্যে নাই। দূর দূর এ আবার বাবা! মিথ্যে কথা সব। বলে কিনা ‘বিশেষ প্রয়োজন হ’লেই তবে ওটা খুলবে।’ ধূর্ত, কপট। বাবা প্রতি তার মনটা বিষিয়ে উঠল। – ‘কি দরকার ছিলো অতগুলো মিথ্যে কথা বলার!’
রাগে দুঃখে ঐ আলমারীটাকে টেনে বাইরে উঠানের ওপর ফেলে দিল। যেন আলমারীটাই যত দোষ করেছে।
তারপর আরো দু এক দিন ঘরের মধ্যে এদিক ওদিক খোঁজাপাতা চলল, যদি অন্য কোথাও কিছু থেকে থাকে।
না, কোথাও কিছু নেই। ছিঃ ছিঃ ছেলের প্রতি বাবা এরকম ব্যবহার করে।