গৃহে শুভকর্মের আয়োজনে ব্যস্ততা। বন্ধুসঙ্গ ও সাহিত্যচর্চায় মানসিক প্রফুল্লতা। উপার্জন বাড়বে। ... বিশদ
তথাপি কর্তব্য নির্ধারণের কিছু সাধারণ নিয়ম ধর্ম বলে দেয়। যেমন, দেশ-কাল-পাত্র সাপেক্ষে কর্তব্য স্থির করতে হবে অর্থাৎ কি করণীয়, তা ঠিক করে নিতে হবে। একই ব্যক্তির বহুবিধ ভূমিকা থাকে জীবনের স্বাভাবিক গতিপথে। সে কারও পিতা, কারও পুত্র, কারও ভাই, কারও বন্ধু, কারও স্বামী, কারও সেবক। কেউ মাতা, কেউ ভগিনী, কেউ জায়া। কেউ রাজা, কেউ শ্রেষ্ঠী, কেউ শ্রমিক, কেউ শিল্পী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা উকিল। কেউ দেশসেবক, কেউ বা সন্ন্যাসী। তাই অনন্ত বৈচিত্র্যের প্রবাহে প্রত্যেক মানুষকে প্রত্যেক মুহূর্ত্তে নির্ধারণ করতে হয় তার আশু কর্তব্য। তাকে ঠিক করে নিতে হয় কার প্রতি সে কি ব্যবহার করবে, কখন কি আচরণ করবে, কোথায় কি ভাবে চলবে। শ্রীসারদা মা কর্তব্যের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন—‘যখন যেমন তখন তেমন, যাকে যেমন তাকে তেমন, যেখানে যেমন সেখানে তেমন।’
কর্তব্যসম্পাদনের মূল কথা সকলের মঙ্গলবিধান। কারণ, মানুষ সমাজের অভিন্ন অংশ। বহুর কল্যাণের সঙ্গে তার নিজের কল্যাণ জড়িত। সেইজন্য কর্তব্যের সঙ্গে নৈতিকতার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বলা যায়, কর্তব্যের আর এক নাম সুনীতিযুক্ত কর্ম। নৈতিক দৃষ্টিতে সম্মত আচরণই সমাজবদ্ধ মানুষের কর্তব্য। তাই শৃঙ্খলাযুক্ত সমাজব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন বিবেকপ্রসূত কিছু অনুশাসন। ধর্ম কর্তৃক সেই অনুশাসনই প্রবর্তিত হয়েছে দেশ ও কালের প্রয়োজন অনুসারে। এই অনুশাসনের কাঠামোতে প্রত্যেক মানুষ নিজের কর্তব্য সহজেই ঠিক করে নিতে পারে।
বৈচিত্র্যময় হিন্দুশাস্ত্রসমূহ এবং অবতারমহাপুরুষবৃন্দ যুগে যুগে ধর্মানুশাসনকে প্রস্তুত করেছেন যুগমানবের উপযোগী ক’রে। রামায়ণে শ্রীরাম-সীতা-হনুমান, লক্ষ্মণ, ভরত প্রভৃতি চরিত্রকে সর্ববিধ কর্তব্যের আদর্শসমাহার স্বরূপ নির্দেশ করা যায়। মনুষ্য সমাজের জন্য কর্তব্যকে আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করে শ্রীরাম হয়েছেন মর্যাদাপুরুষোত্তম। মহাভারতে, গীতায় তথা ভাগবতে কর্তব্যের আদর্শকে নূতনভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন শ্রীকৃষ্ণ। স্বয়ং ভগবানের দ্বারাই কর্তব্যসমূহ প্রতিষ্ঠিত হ’ল নূতন মর্যাদার বিন্দুতে। গীতায় কর্তব্যনির্ধারণের নিখুঁত মানদণ্ড দিলেন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ। বললনে—স্বধর্ম পালনই শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। তখন বর্ণাশ্রমধর্মের অনুশাসন স্বধর্মনির্ধারণের ভিত্তি ছিল। সে ধর্মানুশাসনে ছিল গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুযায়ী অথবা যোগ্যতানুযায়ী কর্তব্য নিরূপণের বিধি।