সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
যৌবনে যে সুযোগ নষ্ট করিবে, প্রৌঢ়ে আর বার্দ্ধক্যে সেই সুযোগ শত মাথা খুঁড়িয়াও ফিরিয়া পাইবে না। যাহা জীবনে লাভ করিতে চাহ, তাহার জন্য শ্রম তো’ এখনই আরম্ভ করিতে হইবে। যাহা তুমি হইতে চাহ, তাহার সাধনা তো’ এখনই ধরিতে হইবে। যৌবনের আকাশে ফানুস উড়াইবে আর বার্দ্ধক্যে প্রাসাদে বাস করিবে, ইহা অলস কল্পনা। বার্দ্ধক্যের প্রাসাদ যৌবনেই ভিত্তির গাথুনি দাবী করিতেছে। বার্দ্ধক্যে যে কোটি কোটি নরমুণ্ডের ঊর্দ্ধে নিজের শির উচাইয়া দাঁড়াইতে চায়, যৌবনে তাহাকে মস্তক নত করিয়া গাইত-কোদাল-শাবল ধরিয়া ভিত্তির মৃত্তিকা খনন করিতে হইবে। লোহা লাল টক্টকে থাকিতেই তাহাতে হাতুড়ির আঘাত করিতে হয়, তবে না তাহা অভীপ্সিত গঠন নেয়। যৌবনে তোমার দেহমন নূতন রক্তকণিকায় লাল হইয়া আছে। আঘাত করিয়া করিয়া ইহাকে এখনই ঈপ্সিত মূর্ত্তিদান করিতে হইবে। বার্দ্ধক্যে যখন হাতুড়ি মারিবে, তখন লোহা ভাঙ্গিবে কিন্তু মুড়িবে না।
যৌবনকে ক্ষণস্থায়ী জানিয়াই সকলে ইহার সুখ-ভোগে অন্ধের মত ঝাঁপাইয়া পড়ে এবং ‘মরিয়া’ হইয়া যৌবনের সুখ-লুন্ঠনে লাগিয়া যায়। কিন্তু যৌবনের সদ্ব্যবহার যে করিয়াছে, তাহার যৌবন অচিরস্থায়ী হয় না। যৌবনে পাপ ও প্রলোভন হইতে নিজেকে বাঁচাইয়া যে চলিয়াছে, তাহার যৌবন অচিরস্থায়ী হয় না। সত্যই যৌবন ক্ষণস্থায়ী নহে। এখন যাহা তোমার দেহে মনে শত চঞ্চলতা জাগাইতেছে, তাহাকেই সংযমের গণ্ডীর মধ্যে রাখিয়া কলুষ ও কলঙ্কের ছোঁয়াচ হইতে রক্ষা করিয়া যদি মাত্র ছয়টী বৎসরও ধীর ও সুনিশ্চিত পদবিক্ষেপে জীবনের পথ চলিতে পার, দেখিও, তোমার যৌবন তোমাকে তোমার শুভ্রকেশ বার্দ্ধক্যেও পরিত্যাগ করে নাই, সেদিনও যৌবন তাহার দুর্জ্জয় সাহস লইয়া, অমিত পরাক্রম লইয়া, অতুল দৃঢ়তা লইয়া তোমার দেহে, তোমার বাক্যে, তোমার চিন্তায়, তোমার কল্পনায়, তোমার শারীরিক ও মানসিক সদভ্যাসে, তোমার অতুলনীয় উদারতায় নিশ্চিন্তে বিরাজ করিতেছে। ভবিষ্যতের সেই পুঞ্জায়মান সম্পদ, তোমার সেই সুতৃপ্ত মনস্বিতা তোমাকে কোটি নর-নারীর মধ্যে উন্নতশির ও শ্রেষ্ঠ করিয়া রাখিবে। ভারতের আদর্শ বর্ষীয়ান্ ঋষি, যাঁহার চরণে সাম্রাজ্যেশ্বরও চিরপ্রণত। মনে রাখিও, সেই ঋষি তরুণ তাপসেরই স্বাভাবিক ও পরিপূর্ণ পরিণতি।