সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
শিব গুরু! শিব গুরু! শিব গুরু! শিব গুরু নিবেদিতার আরাধ্য। নিবেদিতার কাছে স্বামীজীই শিব গুরু। গুরুর দেহ-ত্যাগের দিন সন্ধ্যায় ধ্যানের সময়ে অজান্তে নিবেদিতার মন অনিবার্যভাবে শিব গুরুর দিকে ধাবিত হয়েছিল, তা নিবেদিতার দিনলিপি থেকে পাওয়া যায়। ‘দি মাস্টার অ্যাজ আই স’ হিম’ গ্রন্থে এ-বিষয়ে তিনি লিখেছেন—‘আরও একজনকে সেই সন্ধ্যায় কে যেন ধ্যানের স্থানে জোর করে আকর্ষণ করে নিয়ে গিয়েছিল; সেখানে তাঁর আত্মা এক অসীম জ্যোতির মুখোমুখি দাঁড়াল—তার সামনে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করে তিনি বলে উঠলেন—শিব গুরু!’
সুদূর লণ্ডনে...ওয়েস্ট এণ্ডের এক বৈঠকখানায় নভেম্বর মাসের এক রবিবারের শীতল অপরাহ্ণে তাঁকে প্রথম দেখি। ঘরের মধ্যে তিনি উপবিষ্ট; সামনে গোল হয়ে ঘিরে বসেছিল শ্রোতার দল, পিছনে অগ্নিকুণ্ডে আগুন জ্বলছিল; প্রশ্নের পর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন; তার মধ্যে প্রায়ই উদাহরণরূপে সংস্কৃত স্তোত্র আবৃতি করছিলেন; সায়াহ্নের আলোক ক্রমে অন্ধকারের মধ্যে অবলুপ্ত হয়ে গেল—নিশ্চয় তাঁর মনে ভেসে এসেছিল সূর্যাস্তকালে ভারতের উদ্যানে, যা কূপপার্শ্বে, বা গ্রামপ্রান্তে বৃক্ষতলে উপবিষ্ট সাধুর কাছে সমবেত শ্রোতাদের স্মৃতির ছবি—তাঁকে ঘিরে এই শ্রোতৃবৃন্দের সমাবেশ সেই দৃশ্যেরই এক বিচিত্র রূপান্তর।…স্বামীজীর পরণে ছিল গেরুয়া পোষাক, তাতে কোমর-বন্ধনী; মনে হচ্ছিল তিনি আমাদের কাছে সুদূর এক দেশের বার্তা বয়ে এনেছেন; কথার মধ্যে প্রায়ই ‘শিব! শিব!’ বলার এক বিচিত্র অভ্যাস; আকারের মধ্যে কোমলতা ও মহত্বের মিশ্রণ, খুবই ধ্যানশীল মানুষের মুখে যা থাকে—যার রূপ র্যাফেল চিত্রিত করেছেন শিশু খ্রীষ্টের ললাটফলকে। স্বামীজী সদ্য বক্তৃতা করেছেন। আগে-ভাগে গিয়ে দ্বিতীয় সারির বাম প্রান্তে আসন নিয়েছিলাম, যে-আসন আমি সর্বদা নিতাম লণ্ডনে, যদিও এক্ষেত্রে তা তখনি মনে পড়েনি। তারপর যখন বসে তাঁর আসার জন্য প্রতীক্ষা করতে লাগলাম, এক বিরাট স্পন্দন, শিহরণ, ঢেকে নিল আমায়, কারণ আমি অনুভব করলাম, বাইরে বিশেষ কিছু মনে না হলেও আমার জীবনের এক পরীক্ষা-মুহূর্ত সমুপস্থিত! শেষবার যখন এইভাবে বসেছিলাম, তারপরে কত কি এল গেল, কত কি ঘটল! আমার ব্যক্তিগত জীবন—দাঁড়িয়ে কোথায়? হারিয়ে গেছে। পরিত্যক্ত পরিচ্ছদের মত ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে তাকে, যাতে করে এই মানুষটির চরণতলে নতজানু হতে পারি। ভুল হয়ে দাঁড়াবে কি তা—মরীচিকা? না কি তা হবে পরম নির্বাচন?—কয়েক মুহূর্ত বাকি, তারপরেই তা ঘোষিত হবে! তিনি এলেন। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর আগমন, শুরু করার আগে তাঁর নীরবতা—সমস্তই অতি মহান এক স্তোত্রসঙ্গীত। এক সুবিশাল আরাধনা।