বিশেষ কোনও পারিবারিক কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। কাজকর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
মেয়েদের স্বীকৃতি প্রদানের প্রশ্নে রাজনীতি হাত গুটিয়ে রয়েছে অনেকাংশেই। বামপন্থীরা নিজেদের সবচেয়ে প্রগতিশীল বলে জাহির করেন। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক দূর, জেলা কমিটির সম্পাদক বাছাইতেও লড়াকু মহিলা কর্মীদের মুখটা তাঁদের মনে পড়ে না। ভোটদানের লাইনে মহিলাদের অংশগ্রহণ ক্রমবর্ধমান। সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একাধিক রাজ্যে ভোটদানে মহিলারাই এগিয়ে। এ তো তাঁদের রাজনৈতিক চেতনাবৃদ্ধিরই লক্ষণ। তবু বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের প্রার্থী মনোনয়নে বেশিরভাগ দলের কাছে মহিলা কর্মীরা দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত গণ্য হন। মন্ত্রিসভা গঠনের বেলাতেও এই অবহেলা অবজ্ঞা প্রতিধ্বনিত হয়। সেখানে প্রকৃত ‘পরিবর্তন’ নিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে বাংলায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়নি, বদল এসেছে সার্বিক চিত্রে। এখানে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, বিধানসভা, রাজ্যের মন্ত্রিসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা, রাজ্য প্রশাসন প্রভৃতি সর্বত্র মেয়েদের জয় জয়কার! মমতার মা-মাটি-মানুষের সরকারের কাছে প্রথম দুটি অগ্রাধিকার হল গরিব বা পিছিয়ে পড়া শ্রেণি এবং নারী। বাংলায় নির্বাচনী ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করেছেন তিনি আগেই। তবে তিনি সার উপলব্ধি করেছেন যে, শুধু সংখ্যায় বৃদ্ধি কোনও সাফল্য বা সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, মানুষকে ‘মানবসম্পদ’-এ রূপান্তরিত করতে পারাই লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের। সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করেন গ্রামাঞ্চলে। তাঁদের বেশিরভাগই গরিব এবং কৃষিজীবী। তাই কৃষি এবং গ্রামোন্নয়নে গুরুত্ব বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
২০১১ সাল থেকে এই নীতি ক্রমবিকশিত হয়ে চলেছে। তারই সঙ্গে সংগত করে চলেছে নারীকল্যাণ। মুখ্যমন্ত্রী জানেন, শিক্ষার চেতনা দিয়েই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে। সেখানে মেয়েদের ‘অব্যবহৃত’ হাত এবং মাথাকে কাজে লাগাতে হবে বেশি করে। তাই তিনি চালু করেছিলেন অভূতপূর্ব প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ এবং স্বভাবতই সেটির বিশ্ববন্দিত হয়ে উঠতে বিলম্ব হয়নি। বাল্যবিবাহ, মানব পাচার এবং শিশুশ্রমের শিকারও মেয়েরা বেশি। তাই কন্যাশ্রীর পাশাপাশি এই সরকার ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পও চালু করেছে। কিন্তু যে মহিলাদের শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের দিন গত হয়েছে, গরিব পরিবারের সেই বিপুল সংখ্যক মহিলার জীবন কেন অন্যের দয়া-দাক্ষিণ্যে চলবে? তাই তাঁদের আর্থিক ক্ষমতায়নের চিন্তাসূত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেছেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প। বলা বাহুল্য, এই প্রকল্পের নিন্দায় সরব হয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাচ্ছিল্য করেছিলেন ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’ বলে। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি আগমার্কা মার্কসবাদীরাও। দেরিতে হলেও এমন ‘ঐতিহাসিক ভুল’ শুধরে নিয়েছেন রাম-বাম উভয়েই। মেয়েদের ভোট বাগাতে বিজেপি তো রাজ্যে রাজ্যে রেউড়ি বণ্টনে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ আজ! পরিবারের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় মমতার সরকার চালু করেছে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প, ওই কার্ডেও ‘পরিবার প্রধান’ হিসেবে কোনও একজন মহিলাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে নবান্ন। সব মিলিয়ে নানা ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের যে অনুকরণীয় সংস্কৃতি মমতা তুলে ধরেছেন বুধবার পেশ হওয়া রাজ্য বাজেট সংগত করেছে তারই সঙ্গে। অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সগর্ব ঘোষণা এই যে, ‘২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের রাজ্য বাজেটের অর্ধেকই বরাদ্দ করা হয়েছ নারী ও কন্যাসন্তানদের উন্নয়নের জন্য।’ তাঁর যথার্থ দাবি, ‘নারী সশক্তিকরণে আমাদের রাজ্যই সর্বাধিক অগ্রণী।’ বাজেট পেশ পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিও ন্যায্য, ‘মহিলাদের উন্নয়নে বাংলায় গৃহীত একাধিক প্রকল্প অন্যান্য রাজ্যের সামনে মডেল।’ আশা করা যায়, উন্নয়নের এই অভিনব ‘ইনক্লুসিভ’ ভাবনা বাংলায় আগামী দিনেও বজায় থাকবে। এই ব্যবস্থা অন্যান্য রাজ্য এবং মোদি সরকারেরও খোলা মনে অনুসরণ করা উচিত। তাতে বাংলার সঙ্গে সারা দেশই সমানভাবে উপকৃত এবং বিকশিত হবে।