বিমা প্রভূতক্ষেত্র থেকে অর্থাগম যোগ। গৃহ সংস্কার বা ক্রয়ের প্রয়োজনীয় অর্থ পেয়ে যেতে পারেন। শরীরের ... বিশদ
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকানোর দায় কার, সেই বহুল চর্চিত বিষয়টি নিয়ে আবার রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা দেশেই সীমান্ত প্রহরার দায়িত্ব যে বিএসএফ-এর, তা একটা দুধের শিশুও জানে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমারেখার মধ্যে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গ। এর একটা বড় অংশ নদী-পথ, যেখানে কাঁটাতারের প্রশ্ন নেই। বাকি স্থলভাগের একটা অংশও কাঁটাতারবিহীন, অ-সুরক্ষিত। এই বিস্তীর্ণ সীমান্তে বিএসএফ-ই একমাত্র ‘প্রাচীর’। অথচ অভিযোগ হল, তাদের উপস্থিতিতে মানুষ থেকে গোরু হেলায় ঢুকে পড়ছে এ রাজ্যে, এ দেশে! সুতরাং অনুপ্রবেশ আটকানোর প্রাথমিক দায়িত্ব মোদি সরকারের অধীন বিএসএফের-ই। এবং এই কেন্দ্রীয় সংস্থা বারবার প্রমাণ করেছে, অনুপ্রবেশ রুখতে তারা কার্যত ব্যর্থ। তবু এই সঙ্কটের সময় অনুপ্রবেশের দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে বিজেপি! উল্টে আবার তাদের অভিযোগ, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে নাকি বেআইনি অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। তাই সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কাশ্মীরে পাকিস্তানি জঙ্গি অনুপ্রবেশ, অসম ও ত্রিপুরায় দেদার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ হচ্ছে কী করে? এই দুই রাজ্যে তো তৃণমূল সরকার নেই। কেন দিল্লি, মুম্বই, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে অনুপ্রবেশ-বিরোধী পুলিসি অভিযান চালাতে হচ্ছে? সেখানেও তো নেই তৃণমূল। তাহলে? এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বাংলায় জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে বিএসএফ। চলছে গেরুয়া শিবিরের ঘৃণ্য চক্রান্ত। রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কেন্দ্র ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি করেছে। সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। এই গুরুতর অভিযোগের জবাবদিহি করতে হবে কেন্দ্রকে।
কিন্তু এটাও সত্য যে, অনুপ্রবেশ রোখার প্রাথমিক দায়িত্ব বিএসএফের হলেও রাজ্য হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তা ভাবের ঘরে চুরি করা হবে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর মদতে বাংলায় জঙ্গি ঢুকছে জেনেও রাজ্য পুলিস কেন কিছু করেনি—সেই প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও! এই জঙ্গিরা কোথায়, কতদিন ধরে রয়েছে—সেই তথ্য না থাকায় পুলিসের বিরুদ্ধে সঙ্গত কারণেই ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। ঘটনাও হল, কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জাল নথি তৈরির একাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে জাল রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্টও তৈরি হয়ে যাচ্ছে! অনুপ্রবেশকারীদের কেউ কেউ গত তিন-চার বছর ধরে রাজ্যে বসবাস করছে বলে জানতে পেরেছে পুলিস। এসব তথ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিপদটা ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। এবং এসব আটকানোর জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিরও দায়িত্ব কিছু কম নয়। অনুপ্রবেশ নিয়ে বিতর্ক চললেও একে রুখতে হলে কেন্দ্র-রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়, গোয়েন্দা তথ্যের আগাম আদান-প্রদান ও যৌথ অভিযান জরুরি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সদিচ্ছা। রাজনৈতিক লাভালাভের অঙ্ককে সরিয়ে রেখে সেই সদিচ্ছা দেখা গেলেই সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তাতে দেশ, রাজ্য উভয়েরই লাভ।