বিমা প্রভূতক্ষেত্র থেকে অর্থাগম যোগ। গৃহ সংস্কার বা ক্রয়ের প্রয়োজনীয় অর্থ পেয়ে যেতে পারেন। শরীরের ... বিশদ
সব মিলিয়ে এখন দেশজুড়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই জোয়ার। তবে চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা পদার্থ কমবেশি সকলের থাকে, তাই অন্য রাজ্যগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া প্রকল্প-নামটি সরাসরি নেয়নি, নিজের পছন্দমতো তা পাল্টেটাল্টে নিয়েছে। যেমন কোনও রাজ্যে সেটি ‘মাহাতারি বন্ধন’ আবার কোথাও গালভরা ‘লাডলি লক্ষ্মী’ কিংবা ‘মাঈয়া সম্মান যোজনা’। যাই হোক, বস্তুটি বাস্তবে অভিন্ন—সে ভাতকে আপনি চাউল, রাইস, অন্ন প্রভৃতি যে নামেই ডাকুন না কেন সেটি ক্ষুধানিবৃত্তির চালসেদ্ধই বটে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নকলনবিশদের মধ্যে এখন যেটা বেশি চিত্তাকর্ষক তা হল—টাকার পরিমাণ—কে কতটা বেশি দিতে পারে তীব্র প্রতিযোগিতা চলেছে তারই। যে সরকার যত বেশি টাকা দিতে পারবে, সেই রাজ্যের শাসক দল ভাবছে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে বেশি গোলে এগিয়ে থাকবে সে।
মানুষকে হাত খুলে দেওয়া ভালো। তবে দেখতে হবে প্রকৃত গরিব মানুষেরই হাতে যেন পৌঁছয় টাকাগুলি, মাঝপথে কোনও নেপোয় না মেরে দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির শুরু এবং শেষকথা হল ‘মানুষ’। তাঁর প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে গরিব ও মহিলা। এই দুই শ্রেণির ক্ষমতায়নই তাঁর স্বপ্ন। তাই গরিব নারীর মুক্তির সংগ্রামে নেমেই তিনি একে একে চালু করেছেন কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিধবা ভাতা, মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সবলা মেলা প্রভৃতি। বাংলার গত এক দশকের সমাজ-অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ করলে এই সত্যই ধরা পড়ে যে—বাংলায় মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও ক্রয়ক্ষমতা এবং রাজনীতি ও প্রশাসনে তাঁদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কমেছে বাল্যবিবাহ, মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার এবং নারীনির্যাতন। জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা রিপোর্টেও উজ্জ্বল জায়গা পাচ্ছে বিষয়গুলি। যেমন পারিবারিক ভোগব্যয় সমীক্ষা রিপোর্টে স্পষ্ট, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে গ্রামীণ ভারতে কেনাকাটার বহর বাড়ছে। এর পিছনে সক্রিয় সরকারি অনুদান প্রকল্পগুলির প্রত্যক্ষ প্রভাব। কারণ একাধিক সরকারি প্রকল্পে গরিব মানুষের হাতে নিয়মিত কিছু অর্থ উঠছে। তা দিয়ে সংসার খরচের বাইরেও কেনাকাটা করছে তারা। গ্রামাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় ধীরে হলেও সমৃদ্ধি আসছে তারই সুবাদে। গ্রামীণ ভারতে ২০২৪ সালে অতিরিক্ত পণ্যবিক্রয় বা গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির হার সাড়ে ৩ শতাংশ। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই সমীক্ষা মেনে নিয়েছে যে পথ দেখাচ্ছেন মমতার বিকল্প এবং ইনক্লুসিভ ইকনমিকস। কারণ, যেসব রাজ্যে সরকারি প্রকল্পগুলির মাধ্যমে গরিব মানুষের হাতে নগদ জোগান বৃদ্ধির ব্যবস্থা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে, পণ্য বিক্রয় বেড়েছে মূলত সেখানেই। এমন তালিকা শীর্ষে স্বভাবতই শোভা পাচ্ছে দুটি নাম—পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তিশগড়। আরও সুখের কথা এই যে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মধ্যে এই প্রশ্নে প্রতিযোগিতাই লক্ষণীয়। বস্তুত লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে জয়ধ্বনি দিয়েই ২০২৪-এর বিদায় এবং ২০২৫-এর শুভারম্ভ।