কর্মের উন্নতি হবে। হস্তশিল্পীদের পক্ষে সময়টা বিশেষ ভালো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মের প্রসার। আর্থিক দিকটি অনুকূল। ... বিশদ
ধাপ্পা দুই: রীতিমতো কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে দাবি করা হচ্ছে, মোদি জমানায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। তার মানে খরচ করার মতো আয়ও বেড়েছে। সম্প্রতি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের তথ্যপ্রকাশ করে সরকার জানিয়েছে, ২০১১-১২ সালে গ্রামে মাথাপিছু মাসিক খরচ ছিল ১ হাজার ৪৩০ টাকা। সেটা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১২২ টাকা। একইভাবে শহরে মাথাপিছু খরচ ২ হাজার ৬৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৯৯৬ টাকা। মোদি সরকারের দাবি, আয় বেড়েছে বলে খরচ করার সামর্থ্যও বেড়েছে। গৃহস্থের মাসিক খরচ দেখলে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা বোঝা যায়। একটি পরিবারের কোন খরচের কতটা, কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে তা থেকে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৈষম্যের ছবিটা ফুটে ওঠে। এই প্রেক্ষিতে মোদির লোকজনেরা খরচ বৃদ্ধির সরল অঙ্কটা পেশ করে বোঝাতে চাইছেন, সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, অত্যন্ত সুচতুরভাবে মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটিকে এর মধ্যে রাখা হয়নি। কারণ তাতে পর্দা ফাঁস হয়ে যাবে। কীরকম? ধরা যাক, ২০১১ সালে কোনও ব্যক্তি ১০০ টাকা রোজগার করলে তাঁর নিত্যপণ্য কিনতে খরচ হতো ৬০ টাকা। সেই ব্যক্তির রোজগার দ্বিগুণ বেড়ে হল ২০০ টাকা। কিন্তু সেই একই দ্রব্যসামগ্রী কিনতে তাঁর খরচ হচ্ছে ১৮০ টাকা। তার মানে, ১০০ টাকা উপার্জনের সময়ে তাঁর সঞ্চয় হতো মাসে ৪০ টাকা। এখন সেটা কমে হচ্ছে ২০ টাকা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় আসলে মানুষের প্রকৃত আয় ও সঞ্চয় দুটোই কমেছে। ফলে খাই-খরচের বাইরে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ যেমন পরিবহণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদিতে খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই কারণে দেশে কিছু ক্ষেত্রে চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে। তবু আয় বৃদ্ধির ঢক্কানিনাদ চলছেই!
আসলে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মকেই নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করে চলেছে মোদিবাহিনী। নিম্নচাপ হলে বৃষ্টি হবেই। ১৪২ কোটির দেশে জিডিপি বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই ভারত একদিন তৃতীয় অর্থনীতির দেশ হবে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাবটাও তেমনই। কিন্তু ঘটনা হল, এই বৃদ্ধি সকলের জন্য হয়নি। বরং মোদি জমানায় আর্থিক অসাম্য বেড়েছে। আয়ের মাপকাঠিতে সমাজের উপরের দিকে থাকা জনসংখ্যার এক শতাংশ দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিক। কিন্তু আম জনতার প্রকৃত আয় বাড়ার বদলে কমেছে। সঞ্চয় আরও কমেছে। শিয়রে তাই সঙ্কট। গরিব-মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকার এই কঠিন লড়াই থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অন্তত এই জমানায়।