পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
কিন্তু, কে শোনে কার কথা? নরেন্দ্র মোদির যে সবচেয়ে বেশি আস্থা চমকে। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ ও উত্থান নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। সেই চমকের ধারাবাহিকতা রক্ষাতেই তাঁকে মরিয়া মনে হয়েছে বরাবর। তাঁর এই চমক সিরিয়ালের প্রথমটিই ছিল জিএসটির প্রবর্তন। বণিক মহল এবং অর্থনীতিবিদদের একটি বড় অংশ মনে করেন, মোদি সরকারের জিএসটি ব্যবস্থায় নানাবিধ ত্রুটি রয়েছে। তড়িঘড়ি চালু করতে গিয়েই ব্যবস্থাটিকে ত্রুটিমুক্ত করার দিকে নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি। তার উপর রয়েছে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে গলদ। এই কারণে ধনিক শ্রেণিকে বহুলাংশে ছাড় দিতে গিয়ে গরিব ও মধ্যবিত্ত জনগণের গলা কাটা পড়ছে অহরহ। আর শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলি (এমএসএমই)। মোদি সরকারের নির্মম কর আদায় ব্যবস্থাকে বিরোধী দলগুলি এজন্য ‘কর সন্ত্রাস’ বলে নিন্দা করেছে বরাবর। পরে বিরোধীদের সঙ্গেই কণ্ঠ মেলাতে দেখা গিয়েছে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমকেও।
কে তিনি? মোদি জমানায় ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলেছেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম। দেশে জিএসটি প্রবর্তনের প্রধান কাণ্ডারীও মোদিবাবুদের একদা বিশেষ পছন্দের এই অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সেই তিনিই এখন আর জিএসটির গুচ্ছ গলদ ঢেকে রাখার পক্ষপাতী নন। তিনিই বলেন, ‘জিএসটি ব্যবস্থায় নানারকম সেস মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৫০ রকমের কর। অন্যান্যগুলিসমেত মোট করের সংখ্যা দাঁড়াবে শ’খানেক। কর-সন্ত্রাস এবং অতিরিক্ত করের বোঝা ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। জিএসটি তাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে!’ জিএসটি, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের একসময়ের ব্যাখ্যায় ছিল ‘কর সন্ত্রাস’ আর আজ তিনি আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলছেন ‘ন্যাশনাল ট্র্যাজেডি’! ‘জাতীয় বিপর্যয়’ বলবেন নাই-বা কেন? সামান্য পপকর্ন খেতেও সাধারণ মানুষকে মোটা অঙ্কের জিএসটি গুনতে হবে! সামাজিক সুরক্ষা নাগরিকের অধিকার। দেশের সরকার তা দিতে অপারগ। তাই দেশবাসীকেই তার সাধ্যমতো জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা কিনতে হয়। মোদির অর্থমন্ত্রকের শ্যেনদৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে সেদিকেও। এই দুই জরুরি বিমার উপরেও মোটা হারে জিএসটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে এই দুটি প্রোডাক্ট। মানুষের অনাগত ভবিষ্যৎ এবং চিকিৎসা পরিষেবার নিশ্চয়তা এইভাবে বস্তুত সরকারের লালসার শিকার হল না কি? নানা মহলের দাবি ছিল—জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা থেকে জিএসটি প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু, জিএসটি কাউন্সিলের সর্বশেষ বৈঠকও দেশবাসীকে এই প্রশ্নে হতাশ করেছে। অথচ জিএসটি চালুর আগে সরকারের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, কর ব্যবস্থাকে সরল এবং উদার করবে নয়া ব্যবস্থা। এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে গরিব ও মধ্যবিত্ত জনগণ এবং এমএসএমই। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে, সরকারের দাবি ও আশ্বাসের বিপরীত ফলই প্রসব করে চলেছে জিএসটি ব্যবস্থা। ভ্রান্ত নীতি আঁকড়ে থাকা সরকারের মুখে অর্থনীতির উত্তরণ এবং অমৃতকাল-এর কথা কোনোভাবেই শোভা পায় না। মন ও মুখ এক হলে জিএসটি ব্যবস্থার সরলীকরণেই আন্তরিক হতো দিল্লি, রেহাই দিত সাধারণ মানুষকেও।