পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
দেশবাসী তাঁর অনুরোধ রেখেছিল, সাড়া দিয়েছিল তাঁর আহ্বানে। শুধু সেবারই নয়, ২০২৪ সালেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে ভারত। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বের এখন তৃতীয় পর্ব। কিন্তু গত দশবছরে নতুন ২০ কোটি চাকরি কি হয়েছে? গেরুয়া শিবিরের কোনও পরম ভক্তও তা মনে করেন না। বাস্তব এটাই যে, দেশে বেকারের সংখ্যা কোটি কোটি। ২০২৩ সালের বাদল অধিবেশনে সরকার জানিয়েছিল যে, দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারে ৪০ লক্ষ অনুমোদিত পদের মধ্যে ৯ লক্ষ ৬৪ হাজার শূন্য। এরপর হাজার হাজার কর্মী অবসর নিয়েছেন। সেসব পদ পূরণের উদ্যোগও নজরে আসে না। ২০২৩ সালের ১৬ জুন একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, গত একদশকে কেন্দ্রীয় সরকার অধিগৃহীত সংস্থাগুলিতে কর্মসংকোচনের হার দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। তার ফলে ২০১২-১৩ থেকে ২০২২-২৩ সালের ভিতরে ২ লক্ষ ৭০ হাজার চাকরি কমে গিয়েছে এবং একইসঙ্গে পাল্টে গিয়েছে কাজ দেওয়ার ধরন। নিয়োগের ক্ষেত্র দখল করেছে চুক্তিভিত্তি কিংবা ক্যাজুয়াল সিস্টেম। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি ক্ষেত্রে শ্রমের বাজারে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। সিএমআইই’র মতে, দেশে সার্বিক বেকারত্বের হারও ভয়াবহ। গত জুন মাসে ছিল ৯.২ শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নীতি আয়োগের একটি রিপোর্টে স্বীকার করা হয় যে, ৪৫ বছরের মধ্যে ভারতে বেকারত্বের হার সেইসময় ছিল সর্বাধিক! প্রথম মোদি সরকার সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বটে, তবে তা হয়ে উঠেছিল শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতোই হাস্যকর। ২০২২ সালে সরকারের দেওয়া আর একটি রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, ২০১৪ থেকে পরবর্তী সাতবছরে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির জন্য ২২ কোটি কর্মপ্রার্থী আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে নিয়োগপত্র হাতে পান মাত্র ৭ লক্ষ ২২ হাজার জন। ২০১৫ সালে সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার জন। দু’বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ৩৮ হাজারে। তারপর পাঁচবছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ২০২২ সালে পর্যন্ত চাকরি দেওয়া হয়েছে বছরে সেই ৩৮ হাজারই।
মোদ্দা কথা, বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিপরীত প্রবণতাই কায়েম করেছে মোদি জমানা। শূন্যপদের পাহাড়চূড়ায় বসেই মোদি এবং এই সরকার ও শাসক দলের কেষ্টবিষ্টুরা ছেলে ভুলানো ছড়া শুনিয়ে চলেছেন। ২০২৪-এর ভোট বৈতরণী পেরনোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালে ১০ লক্ষ চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এজন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন দেড় বছর। সেই দিনক্ষণ পেরিয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। বাস্তব অন্য কথা বললেও মোদি দাবি করা ছাড়েননি। সোমবার এক রোজগার মেলায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেড় বছরে আমাদের সরকার প্রায় ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি দিয়েছে। আমাদের মতো এত চাকরি আজ পর্যন্ত কোনও সরকার দেয়নি।’ ৭১ হাজার নতুন নিয়োগপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে তাঁর আরও দাবি, গ্রামীণ কর্মসংস্থানকে তাঁর সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের প্রবণতা এখন বহুমুখী। আসলে এই সরকার বেকার সমস্যার সমাধান চায় না। তাহলে বাস্তবটা মেনে নিয়েই দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজত এবং আন্তরিক উদ্যোগ নিত। মোদিজি হাঁটছেন উল্টো পথে। একটা করে ভোট আসে এবং তখনকার মতো বেঁচে যাওয়ার ফন্দি আঁটেন তিনি। তাতে একাধিকবার তাঁর সাময়িক ও ব্যক্তিগত ‘জয়’ হলেও বারবার হেরেছে দেশ। এতে যে তাঁর পার্টি বিজেপিরও দীর্ঘ মেয়াদে কল্যাণ হবে না, তা হলফ করেই বলা যায়।