পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
তাঁকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্যে তোলপাড় এখন তামাম ভারত। বুধবার দফায় দফায় মুলতুবি হল সংসদের উভয় কক্ষ। বিরোধীরা সমস্বরে দাবি তুললেন, বাবাসাহেবকে অপমান করেছেন শাহ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। যে প্রধানমন্ত্রী কোনও বিরূপ পরিস্থিতিকেই পরোয়া করেন না—মণিপুর কিংবা বাংলাদেশ ইস্যুতেও নীরব নির্বাক রাখতে পেরেছেন নিজেকে—তাঁর কাছে নিঃসন্দেহে এ এক অভূতপূর্ব এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা। সরকারের তরফেও ভাষণের বিতর্কিত অংশ এবং পুরোটা পাশাপাশি প্রকাশ করে প্রমাণের চেষ্টা চলে যে, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোটেই আম্বেদকরকে অসম্মান করেননি।’ কিন্তু এই সাফাই বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। বরং সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে গিয়েছে যে, সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে এই ‘শাহি’ আক্রমণ। আসলে এই সরকার গণতন্ত্র মানে না। কারণ গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি আরএসএস ও বিজেপির কোনও শ্রদ্ধা নেই। তাই সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পরেও মোদি সরকার বিরোধী দলের অস্তিত্ব সহ্য করতে পারে না। এই কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসক দলই আমদানি করেছে সিঙ্গল ইঞ্জিন, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের এক অবাঞ্ছিত অগণতান্ত্রিক তত্ত্ব। কোনও সন্দেহ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নীতিগতভাবে নাকচ করার মানসিকতাই পরিস্ফুট হয়েছে এতে। কী সংসদের ভিতরে, কী বাইরে—গঠনমূলক আলোচনার পরিসর ধ্বংসসহ বিরোধীদের অন্যায়ভাবে দুরমুশ করেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলে এই সরকার।
বস্তুত বিরোধীদের আক্রমণ শানাতে শানাতেই এই সরকারের আগাপাছতলা ণত্বষত্বজ্ঞানরহিত হয়ে গিয়েছে। যে মনীষীতুল্য মানুষটি দেশবাসীকে একটি অসামান্য সংবিধান উপহার দিয়েছেন, রেখেছেন সাম্যের ভিত্তিতে সামনে এগনোর পথনির্দেশ, সেই বাবাসাহেবকে নিয়ে কুরুচিকর কটাক্ষ তারই ফল বইকি। স্বাভাবিকভাবেই বরফ গলেনি এখনও। রাজ্যসভায় শাহের বিরুদ্ধে ‘স্বাধিকার ভঙ্গে’র নোটিস দিয়েছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। ওয়াক আউটও করেছিল তৃণমূল। ওইসঙ্গে এক্স-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দেগেছেন, ‘বিজেপির দলিত বিরোধী, জাতপাতের মানসিকতা সামনে এসে গিয়েছে। অবশ্য যারা ঘৃণা আর ধর্মান্ধতাকে উস্কায়, তাদের থেকে কীই-বা আশা করা যায়? ২৪০ আসন পেয়েই যদি বিজেপি এমন অপমান করতে পারে, তাহলে ৪০০ পেলে কী হতো?’ রাহুল গান্ধীও আক্রমণ করেছেন একই সুরে ‘এই অপমান সহ্য করব না। সংবিধান বদলে দেওয়াই নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য।’ এমন একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং যিনি সংবিধান ও সংবিধান প্রণেতাকে সম্মান দিতে জানেন না, দেশবাসী তাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ারে দেখতে চায় না। অমিত শাহ তাঁর পদের পবিত্রতা, গুরুত্ব—দুইই ভুলেছেন। এই অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনায় বিজেপির মুখের উপর থেকে খসে পড়েছে তার দলিত-বিরোধী মুখোশটা এবং প্রকট হয়ে গিয়েছে সঙ্ঘের অনুসারী রাজনৈতিক দলের মনুবাদী রূপটি। দেশবাসী দেখতে চায়, প্রধানমন্ত্রী কবে শাহকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেন এবং তাঁর হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি নিজেই।