শেয়ার/ ফাটকা প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে অর্থকড়ি উপার্জন বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্যবসায় দিনটি মোটামুটি। ... বিশদ
আনাজের দাম বৃদ্ধির গুণাগার দিতে হচ্ছে আম জনতাকে। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায়, আম জনতার এই সর্বনাশে পৌষ মাস দেখা দিয়েছে কৃষক সমাজের? এমন সরলীকরণ করলে অবশ্য অঙ্কে ডাহা ফেল। কারণ খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, খুচরো বাজার থেকে যে দামে পণ্য কিনছে ক্রেতা, চাষিরা গড়ে তার ৪০ শতাংশ দামও পাচ্ছে না! যেমন আলুতে ১০০ টাকার মধ্যে কৃষকের প্রাপ্তি ৩৬.৭ শতাংশ, পেঁয়াজে ৩৬.২ শতাংশ, টম্যাটোয় ৩৩.৫ শতাংশ। আবার কলায় প্রাপ্তি ৩০.৮ শতাংশ, আমে ৪২ শতাংশ ইত্যাদি। তার মানে, পণ্যের বাজার-দামের সিংহভাগ লুট করে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা, যারা কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছে। অথচ কৃষক যাতে ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়, ক্রেতা যাতে স্থানীয় বাজার থেকে সঠিক মূল্যে পণ্য কিনতে পারে—তা নিশ্চিত করতে যোগসূত্রকারীর ভূমিকা পালন করার কথা প্রশাসনের। কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষই যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালন করলে দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারত। কিন্তু এই মধ্যস্বত্বভোগী দালালরাজ একটা প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নেওয়ায় তার ফল ভুগতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলকে। যদিও ভোট এলে ‘কৃষক দরদি’ সাজতে প্রতিশ্রুতির কোনও ফাঁক রাখে না মোদি সরকার। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ঘোষণা ছিল, ক্ষমতায় এলে তিন বছরের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হবে। ঘটনা হল, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে একজন কৃষকের মাথাপিছু আয় ছিল, ৯৬ হাজার ৭০৩ টাকা। ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে বছরে ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৭৮ টাকা। এই সময়কালে মূল্যবৃদ্ধির হার যোগ করলে আয় কি দ্বিগুণ হল? রিপোর্ট বলছে, মনমোহন সিংয়ের আমলে দশ বছরে কৃষকের আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩ শতাংশ। মোদি জমানায় তা কমে হয়েছে ২.৮ শতাংশ (২০২১ সালে)। তার মানে, প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবে বিস্তর ফারাক।
গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও আনাজের দাম বৃদ্ধি গরিব-মধ্যবিত্তের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষত উৎসব ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলায় শেষমেশ এই দাম বৃদ্ধির হার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ জানে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পথে নেমেছে রাজ্য সরকার। একদিকে পণ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখা, অন্যদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা—এই দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই এখন রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে এখন গরমের সব্জির উৎপাদন শেষের মুখে, চাষিদের জোগানেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আবার লঙ্কা, টম্যাটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপি, পেঁয়াজ সহ একাধিক পণ্য আসছে ভিন রাজ্য থেকে। ফলে দাম বেশি হচ্ছে। এরই সঙ্গে নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের বিষয়টি চিন্তা বাড়াচ্ছে। যদিও পাইকারির সঙ্গে খুচরো বাজারের সব্জির দামের ফারাক কমাতে নিয়মিত নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকারের তৈরি টাস্ক ফোর্স। যা আশার কথা। রাজ্য সরকারের এই সদিচ্ছা ও তৎপরতা সত্ত্বেও কাজ কতটা হবে, মানুষ কতটা রিলিফ পাবে—তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ের অবকাশ আছে।