সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
এই গেরুয়াকরণের চেষ্টা অবশ্য নতুন নয়। বিজেপি আমলে রঙের সঙ্গে নাম বদলও হয়েছে নির্বিচারে। যেমন, মোগল সরাই স্টেশনের নাম বদলে হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায়, নাম বদল হয়েছে এলাহাবাদেরও, হয়েছে প্রয়াগরাজ। এমনকী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রং গেরুয়া না করায় প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এই মোদি জমানায়। গত নভেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্র জানায়, ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে’ নিয়ম মেনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রং গেরুয়া করা হয়নি। এই ‘অজুহাতে’ প্রকল্পের ৮০০ কোটি টাকা আটকে দেয় কেন্দ্র। তার আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাড়ির রং নিয়েও কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এই রং-বাজির আস্ফালন দেখা যায় একটি হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রেও। ওই সিনেমার নায়িকা কেন গেরুয়া বিকিনি পরে গান গেয়েছেন সেই কারণ দেখিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার দাবিও তোলে। গেরুয়া রং নিয়ে এই চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি যখন সরকারি মদতে জাঁকিয়ে বসেছে তখন মনে করিয়ে দেওয়া যাক যে, দেশের ত্রিবর্ণ পতাকার (গেরুয়া-সাদা-সবুজ) রং নিয়ে গোড়ার দিকে সব থেকে বেশি বিরোধী ছিল আরএসএস। তাদের পত্রিকা অর্গানাইজার-এ স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন আরএসএস নেতা গোলওয়ালকর লিখেছিলেন, ‘যারা ভাগ্যের জোরে আজ ক্ষমতায় এসেছে তারা আমাদের হাতে এই ত্রিবর্ণ পতাকা তুলে দিয়েছে। কিন্তু এই ত্রিবর্ণ পতাকাকে কোনওদিন কোনও হিন্দু সম্মান করবে না। তিন শব্দটাই অশুভ। এই তিন রঙের পতাকা দেশের উপর অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলবে, দেশের পক্ষে তা ক্ষতিকর।’ ভাগ্যের পরিহাস হল, প্রধানমন্ত্রী হয়ে লালকেল্লায় এই ত্রিবর্ণ পতাকাই তোলেন গোলওয়ালকরের শিষ্য নরেন্দ্র মোদি।
অথচ এ দেশ যে নানা ধর্ম, নানা বর্ণ, নানা রঙের সমাহারে তৈরি একটি ফুলের তোড়ার মতো—তা দিনের আলোর মতোই সত্য। সম্প্রতি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থা সিএসডিএস-লোকমত-এর একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ভারতে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার আছে। প্রতি দশ জন হিন্দুর মধ্যে আট জন মনে করেন, এ দেশ সব ধর্মাবলম্বীর। অতএব হিন্দু রাষ্ট্রের খোয়াব দেখিয়ে নিজেদের পছন্দের নাম বা রং লাগিয়ে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন পাওয়া যাবে না সেটা গৈরিক জাতীয়তাবাদীদের মনে রাখা দরকার। মনে রাখা ভালো, দেশের মঙ্গল কখনও নাম বা রং বদলে হবে না। বরং সকলের জন্য রুটি-রুজি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-বাসস্থান করার কাজে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা উচিত। সেটাই চায় দেশবাসী।