সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
যে অভিযোগ নিয়ে গত এক দশক গোটা দেশ তোলপাড়, তা নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন তথ্য সামনে এলে নড়েচড়ে বসতেই হয়। আর তা করতে গিয়েই দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী অর্ধসত্য বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, মোদির এই পরিসংখ্যান ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ইডির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা। কিন্তু তার পরেও পনেরো মাসে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই আপডেট দেননি প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া এই পরিসংখ্যানের শুরু ২০০৫ থেকে, যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল ইউপিএ। অর্থাৎ, ২০০৫ থেকে ২০২৩-এর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক তছরুপের অভিযোগে মোট ৫ হাজার ৯০৬টি মামলা করেছে ইডি। এর মধ্যে মাত্র ১৭৬টি মামলা হয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, যা ৩ শতাংশের কম। মোদি তাঁর সাক্ষাৎকারে সিবিআইয়ের মামলা নিয়ে একটি কথাও বলেননি। হয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই। সব মিলিয়ে তাই প্রধানমন্ত্রীর এই দাবি বড়সড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তথ্য বলছে, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউপিএ আমলে ২৬ জন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল ইডি। এর মধ্যে ১৪ জন অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ বিরোধী দলের নেতানেত্রী ছিলেন। ওই সময়কালে ৭২ জন রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল সিবিআই। এর মধ্যে ৪৩ জন বা ৬০ শতাংশ ছিল বিরোধী শিবিরের। পক্ষান্তরে ২০১৪-২৪ সাল পর্যন্ত মোদি জমানায় ১২১ জন রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইডি। এর মধ্যে ১১৫ জন বা ৯৫ শতাংশই বিরোধী শিবিবের। এই সময়ে ১২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে সিবিআই। যার মধ্যে ১১৮ জন বা ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলগুলির নেতা-মন্ত্রী। ইউপিএ আমলে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত চলাকালীন কাউকে গ্রেপ্তার করা না হলেও মোদি জমানায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৯ জন। বিরোধী যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইডি, সিবিআই তাঁদের মধ্যে একজন মুখ্যমন্ত্রী, ১৪ জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ১৯ জন মন্ত্রী, ২৪ জন সাংসদ, ৭ জন প্রাক্তন সাংসদ, ২১ জন বিধায়ক, ১১ জন প্রাক্তন বিধায়কের নাম উল্লেখযোগ্য।
বিরোধীদের অভিযোগ, আর্থিক তছরুপের দায়ে বা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ইডি সিবিআইয়ের মামলা হয় বন্ধ করা হয়েছে অথবা ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী, অশোক চ্যবন, প্রফুল্ল প্যাটেল সহ অনেকে। বিজেপির ‘ওয়াশিং মেশিনে’ এঁরা সবাই ‘ক্লিনচিট’ পেয়েছেন! অথচ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাক্ষাৎকারে এই নিয়ে টুঁ শব্দটিও করেননি! দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিজেপি নেতারা কীভাবে নিশ্চিন্তে রয়েছেন তা বোঝাতে গিয়ে মহারাষ্ট্রের এক নেতা বলেছেন, ‘ইডি আমার পিছনে আসবে না। কারণ আমি একজন বিজেপি সাংসদ।’ এসব দেখে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সঠিকভাবেই বলেছেন, নির্বাচনের আগে এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ করছেন মোদি। আর মোদির হুঁশিয়ারি, ভোটে জিতে ফিরলে এজেন্সির অভিযান আরও গতি পাবে। এ তো প্রচ্ছন্ন হুমকি। তবে কি আগামী দিনে বড় মাপের প্রায় সব বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের ঠিকানা হবে জেল? উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ। কিন্তু মোদির রাজত্বে এই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।