পিতার স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত তিনটে এজেন্সি হল সিবিআই, ইডি এবং ইনকাম ট্যাক্স। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) হল ভারত সরকারের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের ভিতরে বাসা বাঁধা দুর্নীতি এবং ঘুষের কারবার ঠেকাতেই সিবিআই তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সিবিআইয়ের এক্তিয়ার অনেকখানি বাড়ানো হয়েছে। কোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্য সরকারের সম্মতি সাপেক্ষে সিবিআই অনেক রাজ্যের নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এমনকী, ‘জেনারেল কনসেন্ট’ পেলে সিবিআই অর্থনৈতিক অপরাধ/দুর্নীতির তদন্ত করে। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন সংক্রান্ত, ড্রাগস ও নারকোটিকস-সহ কিছু স্পেশাল ক্রাইমের তদন্ত করে সিবিআই। অর্থনৈতিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে, অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের হয়ে লড়াই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি)। অর্থমন্ত্রকের অধীনে যে রাজস্ব দপ্তর আছে, ইডি হল তার ইকনমিক ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। আইআরএস, ইন্ডিয়ান কর্পোরেট ল সার্ভিস, আইপিএস এবং আইএএস, আর ইডির নিজস্ব ক্যাডার অফিসারদের দিয়ে পুরো কাজটি চলে। অর্থমন্ত্রকের রাজস্ব দপ্তরের অধীন আয়কর বিভাগও একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় এজেন্সি। অ্যাপেক্স বডি হিসেবে এই এজেন্সির মাথায় রয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি)। আয়কর বিভাগের কাজ হল প্রত্যক্ষ কর বিষয়ে যত কেন্দ্রীয় আইন আছে সেগুলি কার্যকর করা এবং মূলত আয়কর সংগ্রহ করা। বেনামি ট্রানজাকশন (প্রোহিবিশন) অ্যাক্ট এবং ব্ল্যাক মানি অ্যাক্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইকনমিক ল কার্যকর করার দায়িত্বও এই বিভাগের উপর ন্যস্ত হয়েছে। ব্যক্তি, সংস্থা, কোম্পানি, লোকাল অথরিটি, সোসাইটি, এনজিও থেকে ইন্টারন্যাশনাল ট্যাক্সেশন পর্যন্ত বিস্তৃত ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের এক্তিয়ার। মূলত রেভিনিউ সার্ভিসের অফিসারদের দিয়েই এই দপ্তরের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয়।
পুরো ব্যবস্থাটাই সংবিধান নির্দিষ্ট নিয়মে চলার কথা। চিহ্নিত সমস্ত ক্ষেত্র থেকে রাজকোষে নিয়মিত রাজস্ব জমা পড়ার বিষয়টা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়। উল্টোদিকে যেসব অসাধু ব্যক্তি, ব্যবসায়ী বা সংস্থা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে নিতে হয় সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে। অর্থনৈতিক কিংবা অন্য ধরনের অপরাধের মোকাবিলাতেও সরকার উপযুক্ত এজেন্সিকে অবশ্যই ব্যবহার করবে। কারণ রাষ্ট্রের এক ও একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত, দুষ্টের দমন। দুষ্ট মানে শুধু খুনি বা ধর্ষক নয়, নানা ধরনের অর্থনৈতিক অপরাধও সমান খারাপ। তাই সমস্ত ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হয়। রাজকোষ ফাঁকিতে পড়ে গেলে দেশ ফাঁকিতে পড়ে যায়। রাজকোষ তার প্রাপ্য অর্থ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত হলে দেশকে কাঙ্ক্ষিত স্তরে উন্নীত করা সম্ভব হয় না। গরিব গরিবই থেকে যায়। বহু মানুষকে শিক্ষা এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে হয়। যাদের অসাধুতার জন্য এত বড় অন্যায় ও বঞ্চনা চলতে থাকে, তাদের অপরাধ লঘু করে দেখার সুযোগ কোথায়? কিন্তু কথা হল, আইন প্রয়োগের অধিকারীরা যেন কোনওভাবেই একচক্ষু না হন। এজেন্সিগুলো যেন শাসকের সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে। সত্যিকার স্বশাসিত সংস্থার স্বাধীনতার গ্যারান্টি থাকা জরুরি। অন্যথায় তাদের পক্ষে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করা সম্ভব নয়। আইনের প্রস্তাবনা মহৎ কিছু বাক্যে ঠাসা থাকলেও বাস্তবে কোনও লাভ হবে না। যেমন জানা যাচ্ছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গেই আয়কর বিভাগ ৪০ হাজার বেআইনি লেনদেনের হদিশ পেলেও অফিসাররা সক্রিয় কেবল বাছাই করা কয়েকটি মামলা নিয়ে। এ নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার অভিযোগ ওঠা অস্বাভাবিক নয়। সিবিআই এবং ইডির ভূমিকাও একই কারণে বারবার নিন্দিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, সরকার আসবে সরকার যাবে, কিন্তু এই এজেন্সিগুলো থাকবে। তাই তাদের স্বাধীন সত্তা, নিরপেক্ষ চরিত্র এবং সাংবিধানিক মর্যাদা কোনওভাবেই ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া যায় না। এই এজেন্সিগুলো মর্যাদা হারানোর অর্থ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সামনে এক বাঁধ নির্মাণ করা।