বিদ্যার্থীরা কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষার ভালো ফল করবে। বিবাহার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের কারও ... বিশদ
সোমবার থেকে শুরু হল লকডাউন থেকে আনলক ১। বিধিনিষেধের মধ্যেই বড়মাপের ছাড়। গৃহবন্দি থেকে যাঁরা হাঁপিয়ে উঠছিলেন, কর্মক্ষেত্র নিয়ে দুশ্চিন্তায় যাঁদের রাতের ঘুম ছুটে যাচ্ছিল—তাঁদের কাছে রাজ্যকে প্রায় স্বাভাবিক চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। এতদিনে মানুষ বুঝেছেন করোনার আশঙ্কা নিয়েই আরও অনেক পথ পেরোতে হবে। সাবধান হয়েই রুটি-রুজির সন্ধানে বেরতে হবে। করোনা সঙ্কটের জেরে কাজ হারানোর ভয় যে নির্মম সত্য, তার প্রমাণ মিলেছে ইতিমধ্যে। কেন্দ্রীয় তথ্য বলছে, কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনে (ইপিএফও) গ্রাহক নথিভুক্তির সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। এমনিতেই বেকারত্ব এদেশে একটা বড় সমস্যা। তার উপর করোনার ধাক্কায় বেসামাল দেশের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দেশজোড়া বেকারত্ব কমাতে উদ্যোগী হতে হবে কেন্দ্রকে। একদিকে কর্মচ্যুত হওয়া, অন্যদিকে চাকরির নতুন বাজার তেমন তৈরি না হওয়া - এই জোড়া ফলার দাপটে যখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, তখনও বাংলা কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম। গত এক বছরে চাকরির বাজার বাড়াতে সক্ষম হয়েছে এই রাজ্য। বেকারদের কাছে যা অক্সিজেন। ‘এগিয়ে বাংলা’ কথাটা যে শুধু স্লোগান নির্ভর নয়, আক্ষরিক অর্থেই সত্য, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে নতুন কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যানে। যাঁরা কথায় কথায় রাজ্যের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগের আঙুল তোলেন, ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেন, তাঁদের জেনে রাখা ভালো, কেন্দ্রই বলছে গত এক বছরের হিসেবে রাজ্যে চাকরির বাজার বেড়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে গত অর্থবর্ষের শেষের দিকে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশজুড়ে যে ধাক্কা লাগে, তা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি এই রাজ্য। মারণ ভাইরাসের প্রভাবে কাজের বাজার পড়তে শুরু করে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ভারতে নতুন নিয়োগ ৪৪ শতাংশ কমে যায়। সেখানে ফেব্রুয়ারিতে এই রাজ্যে নতুন কাজ পেয়েছেন প্রায় ৩২ হাজার মানুষ। মার্চেও নতুন নিয়োগ হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজারের মতো। শ্রমমন্ত্রকের পে-রোল ডেটা থেকে জানা গিয়েছে, গত অর্থ বছরে (২০১৯-২০) এরাজ্যে চাকরি পেয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ ৬৯ হাজার মানুষ। যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ছয় হাজার বেশি। লক্ষণীয়ভাবে, ৩৫ বছর পেরিয়ে যাওয়া মানুষের নতুন করে চাকরি পাওয়ার সংখ্যাও এরাজ্যে নেহাত কম নয়। এই হিসেব সংগঠিত ক্ষেত্রের যাঁরা পিএফের আওতাধীন। এর বাইরে অসংগঠিত ক্ষেত্রের বহু মানুষ আছেন, যাঁদের জন্য কিছু না কিছু কাজের সুযোগ তৈরি করেছে বাংলার সরকার।
দেশে কোটি কোটি বেকারের মুখে হাসি ফোঁটাতে কোটি কোটি চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল বিজেপি। সেসব যে নিতান্তই ফাঁকা আওয়াজ ছিল তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন করোনাকে সামনে রেখে অজুহাত তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সব ক্ষেত্রের মতো এখানেও ব্যতিক্রম। দেশের মধ্যে একটি অঙ্গরাজ্য, তার অনেক বাধ্যবাধকতা, সীমিত ক্ষমতা, বিশ্বজুড়ে শিল্পের মন্দা-তবু কর্মসংস্থানের নিত্যনতুন সুযোগ তৈরি করতে তিনি অবিচল। যা বলেন, তাই করার চেষ্টা করেন। এই কাজ হারানোর দিনে রাজ্যে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হওয়ায় তাই কুর্নিশ প্রাপ্য মুখ্যমন্ত্রীর।