বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
নোট বাতিলের উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দুর্নীতি, কালো টাকা ও জঙ্গি দমনের লক্ষ্যেই তাঁর এই পদক্ষেপ। তাঁর এই আচমকা ঘোষণায় দেশের সাধারণ মানুষ ঘোর বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন, বিশেষ করে চিকিৎসার প্রয়োজনে বাইরে থাকা লোকজন। কারণ জরুরি প্রয়োজনে কাছে রাখা সমস্ত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিমেষের মধ্যে অচল হয়ে গিয়েছিল। সবই হয়ে গিয়েছিল ‘কালাধন’। কেউ সেই টাকা নিতে চাইছিলেন না। ফলে ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে পড়েছিলেন। নতুন নোটের জোগান না থাকায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু হয়েছিল টাকা তোলায়। বহু কন্যাদায়গ্রস্ত বাবাকে বিয়ের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করার পরেও পিছিয়ে দিতে হয়েছিল বিয়ের দিন। নিজের গচ্ছিত রাখা টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কষ্ট হয়েছিল প্রচুর। কেউ কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে মারা পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তবুও দেশের মানুষ মেনে নিয়েছিলেন। কারণ ৫৬ ইঞ্চির সম্মোহনী ভাষণে মুগ্ধ দেশবাসী দেশ গড়ার শরিক হতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, নোট বাতিল কোনও তুঘলকি সিদ্ধান্ত নয়, নোট বাতিল জঙ্গি দমনের স্বার্থে, নোট বাতিল কালাধনের বিরুদ্ধে, নোট বাতিল দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে। বলেছিলেন, নতুন নোটে এমন সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে সহজে কেউ জাল করতে পারবে না। তাঁর এই দাবিকে আরও শক্তপোক্ত মাটির উপর দাঁড় করানোর জন্য রটানো হয়েছিল বহু গুজবও। বলা হয়েছিল, ২০০০ টাকার মধ্যে নাকি এমন চিপ লাগানো আছে, যা মাটির নীচে লুকানো থাকলেও যন্ত্রের সাহায্যে খুঁজে পাওয়া যাবে। তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেশের নিরক্ষর মানুষটিও আজ বুঝতে পারছেন, সে সবই ছিল রটনা, বাস্তবের বহু যোজন দূরে। নোট বাতিলের পর নানা পথ বেয়ে শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগই ফিরে এসেছে ব্যাঙ্কগুলিতে। এ হিসেব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের।
এবার দেখা যাক, নোট বাতিল করে জাল নোট আটকানোর যে ঘোষণা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন, তার কী হাল! ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তাদের সর্বশেষ অ্যানুয়াল রিপোর্ট ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’য় বলছে, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দেশজুড়ে ৪৬.০৬কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৫৬.৩১ শতাংশই ২০০০ টাকার নোট। পরিসংখ্যান আরও বলছে, ২০০০ টাকার জাল নোট উদ্ধারের সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। এই অবস্থা দেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নাকি ২০১৯ সালে একটিও ২০০০ টাকার নোট ছাপায়নি। অনেকেই বলছেন, মোদিজির চালু করা ২০০০ টাকার নোট নাকি ধীরে ধীরে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে।
তবে, এসবের চেয়েও বড় এবং মারাত্মক খবরটি হল, দেশজুড়ে যত জাল দু’হাজার টাকার নোট উদ্ধার হয়েছে তার শীর্ষে রয়েছে মোদিজির গুজরাত। দু’হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধারে তাঁর রাজ্য এক নম্বরে। পেয়েছে সেরার শিরোপা। এখন ২০০০ টাকার জাল নোট উদ্ধারে গুজরাত সেরা হওয়ায় দু’রকম কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, গুজরাতেই তৈরি হচ্ছে জাল নোট। সেই কারণেই সেখানে সব চেয়ে বেশি জাল নোট উদ্ধার হয়েছে এবং হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, গুজরাত অন্য রাজ্যের তুলনায় জাল নোটের ব্যাপারে বেশি সক্রিয় বলেই সেখানে উদ্ধারের সংখ্যাটা বেশি। জাল নোট উদ্ধারে গুজরাতের এক নম্বর হওয়ার কারণ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু, একটা বিষয়ে কোনও বিতর্ক নেই, দেশে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে জাল নোট। ব্যর্থ হয়েছে নোটবন্দির উদ্দেশ্য। জাল নোট, কালোধন সবই চলছে তাদের নিজের নিয়মে। সাধারণ মানুষের পাওনা দুর্ভোগ।