সংবাদদাতা, রামপুরহাট: উন্নয়নের ছোঁয়াতেই বদলে গেছে তারাপীঠ। এখন সপ্তাহের প্রতিটি দিনই পর্যটকদের ঢল নামে। ২০১৪ সালে তারাপীঠে পুজো দিতে এসে মন্দির সহ তীর্থক্ষেত্রের ঘিঞ্জি পরিবেশ চাক্ষুষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে তীর্থক্ষেত্রের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করেন। ৩২৬০ স্কোয়ার ফুট জায়গা নিয়ে তারাপীঠ মন্দির চত্বর। যার মধ্যে ৩৫০ স্কোয়ার ফুট জায়গার মধ্যে মায়ের গর্ভগৃহ। সেই গর্ভগৃহকে অক্ষত রেখে প্রথম পর্যায়ে খনন কার্য চালিয়ে ৫০ শতাংশ আণ্ডারগ্রাউণ্ডের কাজ শেষ হয়েছে। পশ্চিমদিকে মাটির তলায় ইতিমধ্যে ৭০ ফুট বাই ২৫ ফুটের ভোগঘর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন। ভোগঘরের পাশেই গড়ে উঠেছে ডাইনিং রুম। সেখানে প্রায় এক হাজার ভক্ত একসঙ্গে বসে ভোগ খেতে পারবেন। উপরের অংশটিকে চাতাল হিসাবে ব্যবহৃত করা হচ্ছে। এর মাপ ৫০ ফুট বাই ২৫ ফুট। এবং সেই চাতালের সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। মন্দিরের চারিদিকে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে টিআরডিএর পক্ষ থেকে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বারকার পশ্চিম পাড়ে প্রায় হাফ কিমি জুড়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। নদীর পাড় উঁচু করে বাঁধিয়ে গড়ে উঠছে পার্ক। টাইল্স দিয়ে রাস্তা ছাড়াও নিরিবিলি আধুনিক বসার জায়গা করা হয়েছে। মনে হবে একেবারে দ্বারকা নদের উপরে রয়েছেন। সেখান থেকে মন্দির, শ্মশান ছাড়াও চারিদিক দেখতে পাওয়া যায়। পার্কটিকে আলোকোজ্জল করতে বসেছে আধুনিক মানের ‘এলইডি’ বাতিস্তম্ভ। এর সঙ্গেই পরিবেশের দিকে নজর দিতে বিভিন্ন পাতাবাহার ও রংবেরঙের ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। দ্বারকার পাড়ের এই সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, তারাপীঠের রাস্তা ডবল লেন করার পাশাপাশি বসানো হয়েছে পথবাতি। আগে সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার গ্রাস করত তীর্থক্ষেত্রকে। এবার সেখানে আলো ঝলমলে। একইভাবে মহাশ্মশানের উন্নয়ন হয়েছে। নদ দূষণের জেরে আগে স্নান করতে পারতেন না পর্যটকরা। সেখানে ইলেকট্রিক চুল্লি হয়েছে। শ্মশানেরও উন্নয়ন করে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। রেল ও সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্টার র্যাঙ্কের হোটেল গড়ে উঠছে। সেখানে মনোরঞ্জনের সব ব্যবস্থায় রয়েছে। স্বভাবতই আগে মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার পর্যটকদের ঢল নামত। এখন আর নির্দিষ্ট কোনও বার বা তিথি নয়, তারাপীঠ এখন প্রতিদিনের পর্যটনক্ষেত্র।
তারাপীঠ হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল গিরি বলেন, দশ বছরে তারাপীঠের চেহারা পাল্টে গিয়েছে। দেবীর মহিমার প্রসার ও উন্নয়নের জন্যই আজ দীঘা, মন্দারমণি, পুরীর মতোই তারাপীঠেও সারাবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। আগে মানুষ পুজো দিয়ে চলে যেতেন। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় মা তারাকে পুজো দিয়ে অনেকেই নলাটেশ্বরী, আকালিপুর গুহ্যকালী, নন্দিকেশ্বরী, বক্রেশ্বর ঘুরতে আসছেন।
অন্যদিকে টিআরডিএর ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগে তারাপীঠজুড়ে যা উন্নয়ন হয়েছে, তাতে এই পীঠ আন্তর্জাতিক তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হতে চলেছে। বিগত কয়েক বছরে তারাপীঠে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। সবে মাত্র প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হলে তারাপীঠ আরও পাল্টে যাবে। পর্যটকরা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। তখন ভিড় আরও বেড়ে যাবে।