বিদ্যার্থীরা পড়াশুনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ কনেযাত্রী হয়ে আমরা ধূপগুড়ির ময়নাতলিতে জয়ার শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলাম। জয়ার বাবা জয়দেববাবুর ঠিক করে দেওয়া ছোট গাড়ি তিনটি দ্রুত গতিতেই ছুটছিল। একটি অল্টো গাড়ি ছিল। তাতে পাঁচজন বসেছিলেন। ওমনি ভ্যানে মুখোমুখি ছ’জন এবং চালকের পাশের আসনে একজন, মোট সাতজন ছিলেন। আর ম্যাজিক ভ্যানে ১২ জন বসেছিলেন। তিনটি গাড়িতে মোট ২৪ জন ছিলেন। আমরা কয়েকজন নিজেদের বাইকেই রওনা হই। মাঝরাস্তায় খুব ঠান্ডা লাগছিল, তাই রানিরহাটের আগে বাইক দাঁড় করিয়ে কষে মাফলার বেঁধে নিই। এতে ওদের গাড়িগুলি কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে জোরে বাইক ছুটিয়ে রাস্তাতেই ওদের ধরে ফেলি। আমরা সকলে ভালোই যাচ্ছিলাম।
জলঢাকা সেতু পেরিয়ে জয়ার শ্বশুরবাড়ি মেরেকেটে ছিল মাত্র আড়াই কিমি। কিন্তু ওদের বাড়ির এক কিমি আগে একটি পেট্রল পাম্পের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনটি গাড়িই। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বোল্ডার বোঝাই লরি প্রথমে ম্যাজিক ভ্যানটি ধাক্কা মারে। সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে উঠে পড়ে এবং উল্টে যায়। ম্যাজিক ভ্যানের ঠিক পিছনেই ছিল ওমনি ভ্যানটি এবং শেষে ছিল অল্টো। জোরে ধাক্কা লাগতেই প্রথম গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে যায়। পরের দু’টিতে লরির একাংশ গিয়ে পড়ে এবং লরি থেকে বোল্ডার পড়ে গাড়ির ভিতরে থাকা সকলে আটকে যায়। বেশি কুয়াশাও ছিল না। আমরা যাঁরা বাইকে ছিলাম, তাঁরাও বেসামাল হয়ে যাই। কয়েকজন আচমকা বাইকের ব্রেক কষায় পড়ে যেতে গিয়েও সামলে নেন। আমিও বেসামাল হয়ে পড়ি। অন্ধকার রাস্তায় তখন শুধুই কান্না আর গোঙানির শব্দ। আমাদের বাইকের হেডলাইট জ্বলছিল। সেই আলো পড়তেই বুঝতে পারি লরির তলায় কমবেশি সকলে চাপা পড়েছেন। চোখের সামনে এমনটা হতে দেখে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাইক থেকে নেমে হাত দিয়ে ভারী ভারী বোল্ডার সরাতে থাকি। গোটা হাতে রক্ত লেগে যায়। ওই স্থানটি রক্তে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যেই গ্রামবাসীরা ছুটে এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। রাস্তায় গাড়ির লাইন পড়ে যায়। অন্য গাড়িচালকরা গাড়ি থেকে নেমে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন। প্রায় ৪০ মিনিট পর ক্রেন এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। কিন্তু তাতেও ভারী লরিটি সরানো যাচ্ছিল না। আরও মিনিট ১৫ পর একটি বুলডোজার আসে। পুলিস, দমকলকর্মী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা সকলকে উদ্ধার করি। ততক্ষণে কয়েটি তরতাজা প্রাণ চলে গিয়েছে। চারটি শিশুরও মৃত্যু হয়। মারাত্মক জখমদের ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। দিদিকে নিয়ে আসা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখানে দিদির মৃত্যু হয়। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ হাসপাতালে ঘুরে গিয়েছেন।