নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: কিছুদিন আগে পর্যন্ত মালদহে বয়স্কদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছিল। এবার কম বয়সীদেরও মারণ ভাইরাস আক্রমণ করছে। সম্প্রতি জেলায় ফেরা বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চিকিৎসকরা এমনটাই জানিয়েছেন। এমনকি আক্রান্তদের মধ্যে এক আট বছরের শিশুও রয়েছে। এত কম বয়সীর মধ্যে করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলা জেলায় এই প্রথম বলে জানা গিয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে জেলার চিকিৎসকমহল উদ্বিগ্ন। কোনও কারণে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। করোনার টীকা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ববিধি এবং সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলাই শ্রেয় বলে তাঁরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার পর্যন্ত মালদহে মোট ১২৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। ওইদিন মোট ২৬ জন করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলে। ওই ২৬ জনের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ২০ বছরের আশপাশে। সকলেই অবশ্য ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিক বলে প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে আট বছরের এক শিশুও রয়েছে। তার বাড়ি ইংলিশবাজার ব্লকের মহদিপুর অঞ্চলে। এই বিষয়টি সামনে আসতেই জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অনেকেরই ধারণা রয়েছে, করোনা ভাইরাস কেবল বয়স্কদের বিপাকে ফেলবে। ওই ধারণা নিয়ে অনেকেই সতর্কতা ও সচেতনতার উর্দ্ধে গিয়ে অবাধ জীবনযাপন করছেন। ভবিষ্যতে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হবে বলে চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসক সমর দাস বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোনও বয়স হয় না। সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য অনেকে বিভিন্ন রকম টোটকা করছেন। কিন্তু ভ্যাকসিনই একমাত্র ভাইরাস থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায়। দিল্লির এক ত্রিশ বছর বয়সী চিকিৎসকও সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। ফলে যুবক-যুবতীদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে না ভোগাই ভালো।
চিকিৎসক ডাঃ পার্থসারথী রায় বলেন, করোনায় বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি। তবে বয়স দেখে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করে এমনটা নয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনুযায়ী রোগের বহিঃপ্রকাশ হয়। করোনায় মৃত্যুর হার কম (২.৫ শতাংশ) হলেও সুস্থ হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত চরম ভুগতে হয়। করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ হয়। এবং ওই সাইটোকাইন শ্বাসযন্ত্রের এপিথেলিয়াম স্তরকে নষ্ট করে দেয়। ফলে শরীরে মধ্যে তৈরি হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হতে পারে না। বরং তা দেহে জমা হয়। অন্যদিকে, অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন শরীরে ঢুকতে পারে না। ফলে ভয়ঙ্কর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেক্ষেত্রে রোগী খুব কম সময়ের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসকের কাছে না গেলে বিপত্তি হতে পারে।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, বর্তমানে আমরা শুধু পরিযায়ী শ্রমিকদের পরীক্ষা করছি। আগামী দিনে তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজনেরও উপসর্গ দেখে পরীক্ষা করা হবে। তখনই গোষ্ঠী সংক্রমণের ব্যাপারে জানা যাবে। তার আগেই যা সতর্কতা অবলম্বন করার করতে হবে।