সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ১ এপ্রিল: জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম এখন কোয়ারান্টাইন সেন্টার। নিউ দিল্লি, ওল্ড দিল্লি, সরাই রহিলা, আনন্দবিহার এই চারটি রেল স্টেশন সারা বছর, দিনরাত গমগম করে মানুষের ভিড়ে। এখন খাঁ খাঁ করছে শূন্যতা। শুধু কিছু ট্রেন দাঁড়িয়ে। যাত্রীর অপেক্ষা নয়। রোগীর প্রতীক্ষায়। রেলমন্ত্রক দেশজুড়ে থমকে থাকা বহু ট্রেনকে কোয়ারান্টাইন সেন্টারে পরিণত করেছে। পুরসভা ও সরকার পরিচালিত স্কুলগুলি থেকে ভেসে আসে রান্নার গন্ধ। প্রধানত খিচুড়ি আর সব্জি। এই স্কুলগুলি এখন আশ্রয় শিবির। ভিনরাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য। ঠিক যেন দেশভাগের পরের দৃশ্য। সেই দৃশ্যকে সত্যি করেছে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের ঘোড়া, খচ্চর, বলদচালিত গাড়িতে চেপে যাওয়া। হাইওয়ে ছেড়ে তারা জঙ্গলের কাঁচা রাস্তায় ঢুকে পড়ছে। কারণ পুলিস ধরলে যেতে দেবে না। ভয় ও আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু নিজামুদ্দিনে তবলিগ-ই-জামাতের ওই সমাবেশ থেকে যেভাবে রাজ্যে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ আসছে, তার জেরে এই প্রথম চরম এক আতঙ্ক গ্রাস করেছে দিল্লি শহরকে। লকডাউন হলেও বিগত কিছুদিন ধরে পুরসভা পরিচালিত মার্কেটে মানুষ যাচ্ছিলেন। মাদার ডেয়ারি ও সুফল কাউন্টারে যথারীতি মাস্ক পরে দূরত্ব রেখে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও দুধ কেনার ভিড় ছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যটা বদলে গিয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সাপ্লাইয়ের সেরকম অভাব নেই দেখে ভিড় করে কেনাকাটা করার প্রবণতা আর ছিল না। বরং প্রতিটি মার্কেট বা দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড় ছিল কমই। তুলনামূলকভাবে বলাই যায়, দিল্লিতে লকডাউন অনেক বেশি মান্য করা হচ্ছে। কিন্তু তাও বাজারে বাজারে সন্ধ্যায় সামান্য জনসমাগম হচ্ছিল। নিজামুদ্দিনের ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই আবার দ্রুত বেশি বেশি কেনাকাটা করে গৃহবন্দি হয়ে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে। যতটা বেরনোর প্রবণতা ছিল, সেটা কমে গিয়েছে। কারণ, ভয়। নিজামুদ্দিনের ওই ধর্মীয় সমাবেশে অংশ নেওয়া মানুষ যে আমার এলাকায় বা পাশে নেই, কে গ্যারান্টি দেবে? তাই এই আশঙ্কা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। আর তাই এই প্রথম ভয়ের চাদরে নিজেকে মুড়ে নিচ্ছে দিল্লি শহর। সবথেকে বেশি যে আশঙ্কা ছিল, সেটাই ঘটতে শুরু করেছে—ডাক্তারদের সংক্রমণ। গতকাল থেকে আরও তিনজন ডাক্তারের সংক্রমণের সংবাদ এসেছে। এই নিয়ে চারজন ডাক্তারের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এল। সেই আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গেল একটি ক্যান্সার হাসপাতাল। আকাশে উড়ছে ড্রোন। নিজামুদ্দিন দরগা সংলগ্ন গোটা এলাকা সারাদিন ধরে চলছে স্যানিটাইজ করা। কনট প্লেস দিল্লির ধর্মতলা এলাকা। সেখানে প্রতিটি রাস্তা জুড়ে হাজার হাজার পায়রার দলের ছবি ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নয়ডা ও যমুনা নদী তীরস্থ জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ঝাঁকে ঝাঁকে ময়ূর দিল্লির পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে। দূষণই ছিল দিল্লির মারণ রোগ। তারপর এসেছিল গোষ্ঠী সংঘর্ষ। সেই দৃশ্য বদলে গিয়েছে। এখন দিল্লি সম্পূর্ণ দূষণহীন এক শহর। অথচ মৃত্যুর আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়ে এসেছে অদৃশ্য ভাইরাস। করোনা।