নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: করোনা বিপর্যয়ের জেরে এ রাজ্যের বাসিন্দা প্রায় দু’লক্ষ মানুষ আটকে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এদের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি। এই বিপর্যয় পর্বে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া এখানকার বাসিন্দাদের দেখভালের জন্য দেশের ১৮ জন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সেই উদ্যোগের পর প্রশাসনিক সূত্রে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা জানা গিয়েছে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, মূলত দক্ষিণ ভারতের কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, পশ্চিম ভারতের গুজরাত, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে আটকে রয়েছে এ রাজ্যের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এছাড়াও চিকিৎসা, ভ্রমণ, শিক্ষা সহ অন্যান্য কাজে গিয়ে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। আটকে পড়া মানুষের দেখভালের বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর নির্দেশে নবান্ন গ্রিভ্যান্স সেলের কর্তা পিবি সেলিম প্রতিদিন ভিন রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আটকে পড়া বাংলার বাসিন্দাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।ওই সূত্রটি জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর আবেদেনে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি এ রাজ্যের আটকে পড়া বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়, খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এ রাজ্যের যে সমস্ত নির্মাণ শ্রমিক কেরলে আটকে রয়েছেন, সিপিএম পরিচালিত পিনারাই বিজয়ন সরকারের সঙ্গেই তাঁদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর। বাংলা ভাষায় এক ভিডিও বার্তায় শশী আটকে পড়া লোকজনকে জানিয়েছেন, চিন্তা করবেন না। বাংলার মতোই এটাকে এখন নিজের বাড়ি বলে ভাবুন। আপনাদের সব দায়িত্ব আমাদের। এদিকে জীবন-জীবিকার তাগিদে বাংলায় এসে আটকে পড়া ভিন রাজ্যের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। মমতার নির্দেশে ওই সমস্ত লোকজনের খাবার, আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়েছে তাঁদের।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যের যে সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারীরা ভিন রাজ্যে গিয়ে আটকে পড়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৩০ হাজারের মতো মানুষ মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর জেলার। এরপরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। এই জেলার ৯ হাজারের বেশি মানুষ আটকে রয়েছেন ভিন রাজ্যে। তারপরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলার প্রায় ৭২০০ জন আটকে রয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যে। একইভাবে আবার ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক সহ তিন হাজারের কিছু বেশি লোক আটকে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে।
অপরদিকে, করোনা বিপর্যয়ের মাঝে ভিন রাজ্য থেকে কোনও লোকজন যাতে এখানে ঢুকতে না পারে, তার জন্য রেলপথেও কড়া নজরদারি শুরু করেছে প্রশাসন। কিন্তু রেলপথ কেন? জিআরপি’র এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, রেল চলাচল বন্ধ। রাজ্য ও জাতীয় সড়কে চলছে কড়া নজরদারি। তাই ভিন রাজ্য থেকে রেল লাইন ধরে হেঁটে এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঢোকার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কয়েকদন আগে আলিপুরদুয়ারে অসম থেকে রেল লাইন ধরে হেঁটে আসা সাতজন শ্রমিকের একটি দলকে আটক করা হয়। তারপর থেকে ভিন রাজ্যের সঙ্গে সংযোগকারী রেলপথ আলিপুরদুয়ার, আসানসোল, খড়্গপুর, বীরভূম সহ আরও কয়েকটি জায়গায় রেলপথে নজরদারি চালানো হচ্ছে।