নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ৯ ফেব্রুয়ারি: দেশজুড়ে মহাজোটের আহ্বান করে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে পাশে আছি, এই বার্তা দেওয়ার পরও রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে দলের জোটের সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতাদের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন। আজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র দিল্লিতে রাহুল গান্ধীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে রাজি নয়। সোমেন মিত্র রাহুলকে বলেছেন, তৃণমূল লাগাতার কংগ্রেসকে দুর্বল করার কাজ করে চলেছে। তাই তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীরা জোটে যেতে চাইছে না। কারণ মমতা কংগ্রেস ভাঙানোর নোংরা খেলায় নেমেছে। রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমেনবাবু বলেন, আমাদের প্রস্তাব রাহুল গান্ধী মেনে নিয়েছেন। রাহুল বলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেস না চাইলে জোট হবে না। এরপরই প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি প্রদেশ কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়তে উৎসাহী? এই সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। রাহুল নিজেও জানতে চেয়েছেন এই সম্ভাবনার কথা। সোমেনবাবু, আবদুল মান্নানরা কিন্তু একথা রাহুলকে বলে আসেননি যে তৃণমূলের মতোই, সিপিএমের সঙ্গেও জোট করতে তাঁরা রাজি নয়। বরং এই নিয়ে দলের মধ্যে আলাপ আলোচনা করা হবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাহুলও সেকথা মেনে নিয়েছেন। সুতরাং রাজ্যে ২০১৬ সালের মতো আবার একটি কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট লোকসভা ভোটে হবে কিনা তা প্রদেশ কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেবে। যদিও এক্ষেত্রে মূল প্রশ্ন হল সিপিএম কি সেই জোটে আগ্রহী? কারণ লাগাতার প্রকাশ কারাত গোষ্ঠী একের পর এক পলিটব্যুরো আর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে জানিয়ে এসেছে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনওরকম নির্বাচনী সখ্য নয়। যদিও রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চায়। এদিকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আজ কংগ্রেসের সঙ্গে পরোক্ষ জোটের একটি বার্তা দিয়ে দিয়েছে। আজ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে আমরা বামফ্রন্ট ব্যানারেই নির্বাচনে লড়াই করব। কিন্তু যে সব আসনে আমাদের কোনও প্রার্থী থাকবে না, সেখানে আমরা আহ্বান করব বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থীদের হারাতে হবে । এবং ওই দুই দলের বিরুদ্ধে ওইসব কেন্দ্রে সবথেকে বেশি ভোট যাতে পড়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ইয়েচুরি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নেবে কোন কোন কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়া হবে। অর্থাৎ ইয়েচুরির এই মন্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে ঘোষিত না হলেও অঘোষিত একটি সমঝোতার রাস্তা খোলাই থাকছে। সুতরাং সেক্ষেত্রে আগামীদিনে আবার কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট একটি অঘোষিত জোট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর যদি সেই অঘোষিত অথবা ঘোষিত আসন সমেঝোতা হয় তাহলে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে থাকবে দুটি ফ্রন্ট। একদিকে বিজেপি এবং অন্যদিকে কংগ্রেস ও সিপিএমের সমঝোতা। এই ফর্মুলা বাস্তবায়িত হলে তৃণমূল ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেবে। চেষ্টা করবে যত বেশি সম্ভব তৃণমূল বিরোধী ভোট ওই দুই প্রতিপক্ষ শিবিরের মধ্যে বিভাজিত হয়।