কর্মে অগ্রগতি হবে। চাকরিজীবীদের পদোন্নতি ও বদলির যোগ আছে। সৎজন সান্নিধ্যে মানসিক আনন্দ। ... বিশদ
কয়েক বছর আগে একটি ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছিল। একটি বাঁদর রাস্তার কলে মুখ ঠেকিয়ে জল খেল। তারপর কলটি প্যাঁচ ঘুরিয়ে বন্ধ করে দিল। দেশের তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পর্যন্ত ভিডিওটি পোস্ট করে সচেতনতার বার্তা দিয়েছিলেন। তারপর নেটিজেনদের অনেকের বক্তব্য ছিল, একটি বাঁদরেরও যে সচেতনতা আছে তা ভারতের অনেক নাগরিকের মধ্যে দেখা যায় না। তাঁরা জল নষ্ট করেই চলেছেন। অমরনাথ এই শ্রেণির অসচেতন নাগরিকদেরই শিক্ষা দিতে বনের মোষ তাড়িয়ে চলেন ঘরের খেয়ে।
এদিন দুপুরের রোদ বেশ চড়া। এদিন কাজেও যাননি অমর। ফলে ফাঁকা বসেছিলেন। তারপর মনটা খচখচ করায় রোদ্দুরের মধ্যেই বেরিয়ে পড়লেন কল বন্ধ করতে। তা করতে করতে রাজবল্লভ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার। তারপর হাতিবাগান ছাড়িয়ে হেদুয়া পর্যন্ত ছুটলেন। গোটা তিরিশেক কল বন্ধ করে তবে শান্তি এল মনে। বললেন, ‘এখন আমরা টাকা দিয়ে জল কিনে খাই। কিন্তু এমন একটা দিন আসবে যখন স্নান করার জন্যও জল কিনতে হবে, স্যার। আমাদের সকলের জল অপচয় বন্ধ করা উচিত।’
অমরনাথের জন্ম পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে। তাঁর বাবা মানুষের বাড়ি পুজো‑অচর্নার কাজ করেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় অমরের বুকের অসুখ ধরা পড়ে। সমস্যা কঠিন আকার নেয়। বুকে অপারেশন করতে হয়। তারপর মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা। আর্থিক সমস্যা কঠিন আকার নেওয়ায় লেখাপড়ায় ইতি। তারপর যখন যেমন কাজ পান তা করেন। শেষপর্যন্ত এলেন কলকাতায়। ছোটখাট যা কাজ পেতেন করতেন। এখনও তাই করেন। রোজগারের কিছু টাকা বাবাকে পাঠান। কিছু টাকা দিয়ে নিজের পেট চালান। এই করতে করতে জল অপচয় চোখে পড়ে। শহুরে কিছু মানুষের বুদ্ধিসুদ্ধির অভাব দেখে গা পিত্তি জ্বলে যেত। তারপর নিজে কল বন্ধ করার কাজে নিয়মিত লেগে পড়েন। অমরনাথের বয়স এখন ২১। যতদিন বাঁচবেন অক্লান্ত হয়ে কল বন্ধ করে জল নষ্ট রুখে যাবেন। বললেন,‘যে রাস্তা দিয়েই যাই জল পড়তে দেখলে কল বন্ধ করে দেব। আর যদি দেখি কল বন্ধ না করে কেউ চলে যাচ্ছেন, তাঁকে অনুরোধ করব কল বন্ধ করে যান প্লিজ।’
উনি খুব প্রয়োজনীয় একটি কাজ করছেন। ওঁকে দেখে সকলের শেখা উচিত। অমরনাথকে সেলাম’-বলেন,শ্যামবাজার-বাগবাজার-হাতিবাগানের বহু বাসিন্দা। উন্নত সমাজের জন্য, ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবীর জন্য কয়েকজন অমরনাথ যদি নিয়মিত জন্ম নেন, তাহলে হয়ত দুনিয়াটার চরিত্রটাই বদলে যেত। নিজস্ব চিত্র