বিদ্যার্থীদের অধিক পরিশ্রম করতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষার ফল ভালো হবে না। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ... বিশদ
তাঁরা জানাচ্ছেন, একই ধরনের বলপ্রয়োগ করে খুন করা হলে যে কোনও মাঝারি বা যুব বয়সের মানুষ প্রতিরোধ করে থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে তা হয় না বললেই চলে। সহজেই নিজেদের কাজ হাসিল করে অকুস্থল থেকে চম্পট দিতে পারে ক্রিমিনালরা। কখনও ব্যক্তিগত আক্রোশ, কখনও সম্পত্তি বা টাকাপয়সার লোভ, কখনও আবার সেইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ঘনিষ্ঠ কাউকে ‘সবক্’ শেখাতে দুষ্কৃতীরা খুন করে।
বিশিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ডাঃ দেবাঞ্জন পান বলেন, নিজেদের জীবনের ব্যর্থতা থেকে অনেকের মধ্যেই সমাজের প্রতি তীব্র রাগ বা আক্রোশের জন্ম হয়। তাই অনেক সময় নৃশংসতার প্রকাশ ঘটে সেই বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার উপর। ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়, প্রকৃতপক্ষে সমাজের প্রতি জিঘাংসা ও নিজের চেপে থাকা রাগের বহিঃপ্রকাশই ঘটে এইসব ক্ষেত্রে। আবার সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনাও থাকতে পারে। ডাঃ পান বলেন, শুনলে অবাক হবেন, অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের শিকার বহু বাচ্চাকেই দেখেছি বাড়িতে নিজের দাদু-দিদার সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছে, ভাবাই যায় না। একইসঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ ও নিষ্ঠুরতা। মানুষ নিষ্ঠুর হয় একেবারে ছোট বয়স থেকে। বিশিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ডাঃ ও পি সিং বলেন, দেখুন, নৃশংসতার অন্যতম কারণ অ-সংবেদনশীল মন। টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া সহ সর্বত্রই আমরা এত নিষ্ঠুর, বিকৃত, ভয়াবহ ঘটনার ভিডিও, ছবি ইত্যাদি দেখি, তাতে মর্মান্তিক পরিণতিতে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কথা, সেই প্রতিক্রিয়া দিতে পারছি না। মন স্পর্শকাতরতা হারাচ্ছে। সূক্ষ্ম অনুভূতি হারাচ্ছে। মনে করছি, যেন এমনটাই হয়ে থাকে, এমনটাই স্বাভাবিক। আর সাধারণ মানুষের মন যেভাবে সুকুমারবৃত্তি হারাচ্ছে, অপরাধীদের মন আরও নির্মম ও নিষ্ঠুর হবে, তা বলাই বাহুল্য।
বিশিষ্ট মনোবিদ ডঃ অমিত চক্রবর্তী বলেন, সত্যিই খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। একের পর এক নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটছে। এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যতদিন যাচ্ছে, নিষ্ঠুরতা বাড়ছে। আমাদের আর তেমনভাবে নাড়া দিয়েও যাচ্ছে না সেগুলি। সত্যিই কি অনুভূতি শূন্যতার দিকে যাচ্ছি আমরা? ভয় হয়।
রাজ্যে কয়েকটি নৃশংস খুন:
বছর কয়েক আগে পিজি হাসপাতালের উল্টোদিকের এলাকার ঘটনা। দিদি, জামাইবাবু, ভাগ্নিকে একইসঙ্গে গুলি ও কুপিয়ে খুন।
এ বছরই নরেন্দ্রপুরের খেয়াদহের কেয়ারটেকার স্বামী-স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহ দুটি ছিন্নবিছিন্ন করে ট্রলি ব্যাগে ভরে রাখে আততায়ীরা।
বছর কয়েক আগে বামনগাছির সৌরভ চৌধুরী হত্যার ঘটনা। যেখানে বুকের উপর বসে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে খুন করার পর দেহটি রেললাইনে ফেলে দিয়ে যায় আততায়ী। যাতে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলেই চালানো যায়।
কৃষ্ণনগরের একটি ঘটনায় স্ত্রীর মাথা ধড় থেকে আলাদা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয় স্বামী। মাথা পাওয়া যায়নি। অবশ্য দেহটি মিলেছিল।
বছর কয়েক আগের ঘটনা। পার্ক সার্কাসের নামকরা দাঁতের ডাক্তারকে গলায় মাফলার জড়ানো অথচ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। দেখে মনে হয় যেন, তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ময়না তদন্তকারীরা মাফলার খুলতেই দেখেন, কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে রক্ত ধুয়ে ফের মাফলার জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিয়ালদহে স্ত্রী, তিন কন্যা ও দুই পুত্রকে একইসঙ্গে ঘুমের ওষুধ মেশানো কোল্ড ড্রিঙ্কস খাইয়ে আচ্ছন্ন করার পর সবাইকেই গলা টিপে খুন করে এক ব্যক্তি। এটিও কয়েক বছর আগের ঘটনা।
তথ্যসূত্র: রাজ্যের একাধিক স্বনামধন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ