কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
সারা শহর যখন উৎসবে শামিল হয়ে যায়, তখন চতুর্থী-পঞ্চমীর দিনে কিছুটা ভিন্ন চিত্রই দেখতে পাওয়া যায় কুমোরটুলি মৃৎশিল্পীপাড়ায়। যার সঙ্গে বিসর্জনের বিষাদের মিল না থাকলেও হাজারো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ঠিকঠাক সময়ে প্রতিমা মণ্ডপে পৌঁছে দিতে পারার একটা ক্লান্তিজড়ানো স্বস্তির ছাপ দেখা যায় শিল্পী-কারিগরদের চোখেমুখে। এর মধ্যেই শুরু হয়ে যায় দূরের জেলার কারিগরদের দেশে ফেরার তোড়জোড়। বৃহস্পতিবার পঞ্চমীর দুপুরে শুনশান কুমোরটুলিতে বসে কথা হচ্ছিল প্রবীণ শিল্পী রামচন্দ্র পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, এত চাপে আমাদের কাজ করতে হয় যে সব প্রতিমা মণ্ডপে চলে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। পুজোর ক’টা দিন কোত্থাও বেরতে ইচ্ছে করে না। ঘরে বসে খাওয়াদাওয়া আর ঘুমিয়েই কাটাতে ভালো লাগে। তবে বাড়ির বাকি সদস্যরা সবাই পুজোর চারদিনই বেরবে বলেও জানিয়ে দিলেন তিনি। মুর্শিদাবাদের গুরুলিয়া গ্রামের প্রবীণ কারিগর বসন্ত দাস বৈরাগ্য শিল্পী দেবব্রত পালের স্টুডিওয় কাজ করেন বহু বছর ধরে। বসন্তবাবু বলেন, ষষ্ঠীর দিন বাড়ি যাব। আমার ছেলেও এখানেই কাজ করে। সে এদিনই চলে গিয়েছে। বউমার জন্য শাড়ি, বাচ্চাদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে নিয়ে লালগোলা প্যাসেঞ্জার ধরেছে এদিনই। শিল্পী দেবব্রতবাবু সব প্রতিমা চলে যাওয়ার পর হিসেব মেলাচ্ছিলেন। একটু পরে বেরবেন কয়েকটি পুজোকমিটির কর্তাদের কাছে। তাঁদের কাছে এখনও কিছু টাকা পাওনা রয়েছে তাঁর। শিল্পী বিশ্বনাথ পাল গিয়েছেন এক পুজোমণ্ডপে, জানালেন তাঁর স্টুডিওর কারিগর বিভাস জানা। তাঁর থেকে জানা গেল, সল্টলেকে একটি আবাসনের প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় হাত ভেঙেছে দুর্গাপ্রতিমার। মণ্ডপে গিয়ে দুপুর থেকেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছেন বিশ্বনাথবাবু।
ফি-বছরই যখন-তখন বৃষ্টি, প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, মৃৎশিল্পীপাড়ার সঙ্কীর্ণ গলির অপরিসর স্টুডিওর মতো নানা প্রতিকূলতাকে সামলে প্রতিমা সঠিক সময়ে মণ্ডপে পৌঁছে দেন শিল্পীরা। তবে এবার পরিস্থিতি আরও কঠিন ছিল। ঠিক পুজোর মুখেই এক সপ্তাহ ধরে যেভাবে বৃষ্টি পড়েছে, তাতে দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছিল কুমোরটুলিতে। কিন্তু কুমোরটুলির ভূমিকা আপাতত সুসম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি উৎসবের দিনগুলো মানুষের আনন্দ যেন ব্যাহত না হয়, সেই আশাই করছেন উৎসবের অন্যতম অংশ এই শিল্পী-কারিগররা।