বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
ফাল্গুন মাসের গোড়া থেকেই তাঁতঘরে শব্দ বৃদ্ধি পায়। তাঁতিদের দাবি, বছরের দুটি সময় তাঁতের কাপড়ের বিশেষ চাহিদা থাকে। প্রথমটি বাংলা নববর্ষ এবং তারপরে দুর্গাপুজো। নববর্ষ থেকেই বাঙালির তথাকথিত ‘পার্বণ’ শুরু হয়ে যায়। তাই এই দিনে তাঁতের কাপড়ের চাহিদা দুর্গাপুজোর থেকেও বেশি থাকে। ছোট ও বড় তাঁত ব্যবসায়ীদের বাজার থাকে রমরমা। পয়লা বৈশাখের মাস দুয়েক আগে থেকেই প্রতি বছরের স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা বরাত দেন তাঁতিদের। স্বপন দেবনাথ নামে নদীয়ার এক তাঁত শিল্পী জানিয়েছেন, ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত প্রত্যেক তাঁতি প্রচুর সংখ্যায় বরাত পান। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছ’টি কাপড় বুনতে হয় তাঁদের। আবার অর্ডার বেশি থাকলে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় সাত থেকে আট। তিনি বলেন, বছরের এই সময় প্রধানত দুটি শব্দ কানে বাজে। প্রথমটি, তাঁত বোনার ঠকাঠক শব্দ, অন্যটি বরাত দেওয়া লোকজন আর পাওনাদারদের তাগাদা ফোনের রিং। বলা বাহুল্য, চলতি বছরে দুটির কোনওটিই কানে বাজছে না বুনন শিল্পীদের।
মহাজনের থেকে ধার করে হাজার হাজার টাকার সুতো কেনেন তাঁতিরা। সেই সুতো বেশিদিন ফেলেও রাখা যায় না। বেশিদিন ফেলে রাখলে তাতে পচন ধরার সম্ভাবনা থাকে। ফলে মাথায় ঋণের বোঝা এবং তাঁত না চলায় পেটের খিদে, সবকিছুই একত্রে বিভীষিকার মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁতিদের। অখিল তরফদার নামে আরও একজন শিল্পী জানিয়েছেন, অনেক ব্যবসায়ী বছরভর অর্ডার দেন। নববর্ষের জন্য বিশেষ কিছু কাপড় তৈরি করার আর্জি জানান ব্যবসায়ীরা। তবে এই লকডাউন পরিস্থিতির জন্য ‘নববর্ষ স্পেশাল অর্ডার’’ বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বহু টাকার কাপড় কিনতে অস্বীকার করায় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাঁতিরা। অখিলবাবু বলেন, অর্ডারের কাপড় বোনা হয়ে যাওয়ায় সেগুলি ফেলতে পারব না। তাই অতি কম লাভে পাড়া-পড়শির মধ্যেই ‘বিলিয়ে’ দিতে হচ্ছে তাঁতির ‘রক্ত জল করা পরিশ্রম’।
রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে গ্রাম-বাংলার তাঁত শিল্পীরা। তাঁদের আতঙ্ক করোনা নিয়ে যতটা, তার থেকে বেশি বরং খেতে না পেয়ে রোগশয্যায় যাওয়ার ভয়। তবে বৃহত্তর স্বার্থে লকডাউন চলাকালীন সচেতন ও সুস্থ থেকে এই ভাইরাস মোকাবিলায় শামিল হতে অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলার হতদরিদ্র তাঁতশিল্পী মহল।