বিদ্যার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
অতীতে ইতালি সহ ইউরোপের অনেকাংশ ছিল খ্রিষ্টান ধর্মযাজক পোপের শাসনাধীন। ১৮ শতকে ইতালিতে পোপের আধিপত্য শেষ হলে ১৯২৯ সালে ইতালির রাজার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী মুসোলিনি ও ভ্যাটিকান সিটির পোপের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীন এক সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে ভ্যাটিক্যান সিটি। এখানে ছড়িয়ে আছে একাধিক বারোক ও রেনেসাঁ শৈলীর কালজয়ী সব স্থাপত্য। চারপাশে চোখে পড়বে অপরূপ সব ভাস্কর্য। দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে রয়েছে সবুজে মোড়া ভ্যাটিকান গার্ডেন। যার মধ্যে রয়েছে ছোট টিলা ভ্যাটিকান হিল। দৃষ্টিনন্দন এই বাগানটির আয়তন ৫৭ একর। এই দেশ শহরের মধ্যে পাথর বাঁধানো পথে হেঁটে হেঁটেই সব ঘুরে দেখতে হবে।
ভ্যাটিকান ভ্রমণ শুরু করুন চোখ ধাঁধানো শিল্পকলার নিদর্শন ভ্যাটিকান মিউজিয়াম থেকে। যেমন এর গঠনশৈলী, তেমন এর দেওয়াল, স্তম্ভ, সিলিং জুড়ে রয়েছে নিখুঁত শিল্পকর্ম। ১৬ শতকে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস এটি নির্মাণ করেন। ভেতরে নানা মহলে থরে থরে সাজানো আছে চিত্রকলা, ভাস্কর্য, পোপেদের ব্যক্তিগত দুর্মুল্য সামগ্রী। মিউজিয়ামের লাগোয়া রাফায়েল চিত্রশালার চারটি ঘরের দেওয়ালে রয়েছে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রাফায়েল ও তাঁর সহশিল্পীদের আঁকা অনবদ্য ফ্রেস্কো। মিউজিয়ামের ইজিপশিয়ান গ্যালারি, ট্যাপেস্ট্রি গ্যালারি, গ্যালারি অফ ম্যাপস, ক্যারেজ প্যাভিলিয়ন সহ অন্যান্য দ্রষ্টব্য দেখে প্রবেশ করুন সিস্টিন চ্যাপেল-এ। আবছা আলোয় মোড়া এই প্রার্থনা কক্ষে পোপের অভিষেক হয়। ১৪৮৩ সালে তৈরি এই স্থাপত্যের সিলিং অলংকৃত করেছিলেন বিশ্ববরেণ্য চিত্রকর মাইকেল অ্যাঞ্জেলো। ১৫০৮ থেকে ১৫১২ সাল ধরে এর সিলিংয়ে তিনি এঁকেছিলেন ৯টি প্যানেল পেইন্টিং সেগুলি আজও অমর হয়ে রয়েছে। এই চিত্রমালার মধ্যে জেনেসিস, আদম-ইভ, ওল্ড আর নিউ টেস্টামেন্ট, দ্য লাস্ট জাজমেন্ট প্রভৃতি মন্ত্রমুগ্ধ করে দেবে। দেওয়ালেও রয়েছে চিত্রমালা। সিস্টিন চ্যাপেলের মধ্যে কথা বলা ও ছবি তোলা নিষেধ। এখান থেকে বেরিয়ে ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখে নিন মিউজিয়ামের বাকী অংশ। কাছেই মহামান্য পোপের বাড়ি অ্যাপোসটলিক প্রাসাদ।
এরপর প্রবেশ করুন পিনাকোটেকা মিউজিয়ামে। মহাকাব্যিক গল্পগাথার শতাধিক মহাচিত্রে সাজানো বিস্ময়কর এই পেইন্টিং গ্যালারি। এখানে দেখবেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, রাফায়েল, পেরুজিনো, ক্যারাভাগ্গি-ও, জিয়োত্তো প্রভৃতি বিখ্যাত চিত্র শিল্পীদের আঁকা অসাধারণ সব ছবি। সবশেষে দ্রষ্টব্য বিশ্বের বৃহত্তম চার্চ ১৬২৬ সালে তৈরি সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা। আকাশছোঁয়া এই বিশাল স্থাপত্য মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, বার্নিনি, ব্রামান্তে, ম্যাডারনো এই সমস্ত দিকপাল শিল্পীদের পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে। ভেতরের মহলে পা দিলে চমকে যাবেন এর ভাস্কর্য, চিত্রকলা, পোপেদের শিল্পমণ্ডিত মূর্তি, রঙিন পাথরের নিখুঁত কারুকার্য, মোজাইক আর রঙিন কাঁচের রংবাহারি শিল্পকর্ম, পাথরের অজস্র ভাস্কর্য দেখে। এটি ক্যাথলিকদের প্রধান চার্চ। এই চার্চের জায়গায় অতীতে সম্রাট নিরোর সার্কাস ভূমি ছিল। এখানে সমাহিত রয়েছেন ধর্মযাজক সেন্ট পিটার। এখানের ব্রোঞ্জের ‘হোলি ডোর’ খোলা হয় ২৫ বছর অন্তর। এখানে রয়েছে পোপদের সমাধিভূমি ভ্যাটিকান গ্রোটে। রয়েছে ট্রেজারি অফ সেন্ট পিটার্স মিউজিয়াম। ব্যাসিলিকার মাঝখানে বার্নিনিকৃত ব্রোঞ্জের স্তম্ভে ঘেরা পোপের সিংহাসন। মাথায় বিরাট নকশা করা চাঁদোয়া। পোপ এখানে বসে প্রার্থনায় অংশ নেন। এর গা দিয়ে সিঁড়ি নেমেছে মাটির নীচে। সেখানে আছে প্রাচীন চার্চের ধ্বংসাবশেষ ও সমাধিস্থল। ব্যাসিলিকার প্রধান গম্বুজটির নকশা করেছিলেন মাইকেল অ্যাঞ্জেলো। ৫৫১টি সিঁড়ি বেয়ে সেখানে ওঠা যায়। কষ্ট কমাতে অর্ধেক সিঁড়ি পথ এড়িয়ে লিফটেও ওঠা যায় খানিকটা। ওপর থেকে ভ্যাটিকান সিটি আর রোম শহরের দৃশ্য দু’চোখ ভরে দেখুন। সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার মধ্যে দেখবেন মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘পিয়েতা’। মাতা মেরির কোলে শুয়ে রয়েছে ক্রুশবিদ্ধ যিশু। ব্যাসিলিকা থেকে বেরোলেই সামনে অশ্বক্ষুরাকৃতির পাথর বাঁধানো প্রশান্ত চত্বর। এটাই সেন্ট পিটার্স স্কোয়্যার। দু’পাশে অর্ধবৃত্তাকারে রয়েছে ২৮৪টি স্তম্ভ যার মাথায় দাঁড়িয়ে আছে ১৪০ জন ধর্মযাজকের মূর্তি। চত্বরের মাঝে রয়েছে দুটি ফোয়ারা আর মিশর থেকে আনা সুউচ্চ ওবেলিক্স পাথর খণ্ড। এই চত্বরটিকে বার্নিনি শিল্পমণ্ডিত করে তুলেছিলেন। এই চত্বরে প্রতি বুধবার সকালে ও বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে পোপ দর্শনার্থীদের সামনে এসে উপস্থিত হন ও প্রার্থনা করেন।