উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কিন্তু, কাগজ দেখতে দেখতে হঠাৎ তিনি ভয়ে চমকে উঠলেন। তিনি দেখলেন সংবাদপত্রের মৃত্যুসংবাদের তালিকায় তাঁর নামটি লেখা আছে। ক্ষণিকের জন্য যেন তাঁর চেতনা লুপ্ত হল। এই অর্ধচেতন অবস্থায় তিনি যেন দেখলেন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে ‘মৃত্যুর ব্যবসায়ী, ডিনামাইটের রাজার মৃত্যু’। ধীরে ধীরে চেতনা ফিরে পাওয়ার পর ভালো করে সংবাদপত্রটি দেখে তাঁর মনে হল হয়তো একই নামের অন্য কোনও লোকের মৃত্যুর খবর সেটি, কিংবা ভুলবশত প্রকাশিত।
কিন্তু তাঁর মনে কিছুক্ষণ আগে আসা ভাবনাটি ভেবেই আবার শিউরে উঠলেন তিনি, ‘মৃত্যুর ব্যবসায়ী’। তবে কি তাঁর মৃত্যুর পর এই নামেই লোকে তাঁকে মনে রাখবে! সেই দিন থেকে তিনি ঠিক করলেন যে তিনি শান্তির জন্য কাজ করবেন। তিনি এমন কিছু করবেন যাতে মৃত্যুর পর লোকে তাঁকে ডিনামাইটের স্রষ্টা নয়, অন্য কোনও ভাবে মনে রাখে। বাস্তবে হয়েওছিল তাই। আমরা স্যার আলফ্রেড নোবেলকে যতটা না মনে রেখেছি ডিনামাইট আবিষ্কারক হিসাবে তার থেকে অনেক বেশি মনে রেখেছি নোবেল পুরস্কারের স্রষ্টা হিসাবে।
আসলে নোবেল প্রথম জীবনে একটু ভিন্ন প্রকৃতির ছিলেন। চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। তাঁর সব সময়েই মনে হতো তাঁর মতো ধনী লোকের কাছে অন্য লোকেরা আসে শুধুমাত্র সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েই। তাঁর এও মনে হতো যে তাঁর আবিষ্কারগুলিকে তাঁর সঙ্গীরা হাতিয়ে নিতে চায়। ফলে তিনি একা থাকতেই পছন্দ করতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিনামাইট, নাইট্রোগ্লিসারিন ইত্যাদির আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি যে বিপুল অর্থ ও সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন সব তিনি উইল করে দান করে দিয়ে গেলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গবেষণার উৎকর্ষের জন্য। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হল। নোবেল তাঁর এই উইল করার জন্য কোনও উকিলের সাহায্য নেননি। কারণ, তিনি ওকালতি পেশার লোকজনকে ভীষণ অপছন্দ করতেন।
তবে, নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর সব কিছু দেওয়ার আগেও তিনি বহু দান-ধ্যান করেছিলেন। একবার তাঁর এক গৃহ পরিচারিকার বিয়ে। সেই পরিচারিকা গিয়ে হাত পাতলেন নোবেলের কাছে। নোবেল সেই পরিচারিকাকে প্রশ্ন করলেন, ‘বলো, তুমি কত টাকা চাও?’ উত্তরে সেই মহিলা বলল, ‘আপনার একদিনের যা উপার্জন’, স্যার আলফ্রেড নোবেল সেই পরিচারিকারে আশা পূর্ণ করেছিলেন। তিনি সে সময় সেই মহিলাকে যে অর্থ দিয়েছিলেন তা আজকের দিনে প্রায় কয়েক লক্ষ মার্কিন ডলারের সমান।
আলফ্রেড নোবেলের এক অদ্ভুত ইচ্ছা ছিল। তিনি চাইতেন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেন অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে গাছের সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।