উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
পলাশী তেজনগরের টালির ঘরে থাকেন শম্পারা। তাঁর বাবা রমেশ মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন। তিনি বলেন, এক ছেলে ও এক মেয়ে দু’জনে পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে টাকার অভাবে আর পড়তে পারেনি। আশা করেছিলাম মেয়ে ভালো ফল করবে। রেজাল্ট ভালোই হয়েছে। তবে আগামী দিনে কীভাবে ওকে পড়াব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চলে না। কাজের অভাবে অনেক সময় ঘরে বসে থাকতে হয়। শম্পার মা লীলা মণ্ডল বলেন, কাজ না থাকলে কোনওরকমে সেলাই কাজ করে আমাদের সংসার চলে।
শম্পা বলেন, আমাদের অভাবের সংসারে মা-বাবা আমাকে সব সময় উৎসাহিত করেছে। বলেছে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। অভাবের কারণে বই পর্যন্ত কিনতে পারিনি। স্কুলে লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু স্কুলে লাইব্রেরিতে বই না থাকায় সমস্যা হয়। পরে বাবা পাড়ার একজনের কাছ থেকে পুরনো বই জোগাড় করে দেয়। সেই বই পড়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। শিক্ষকরাও আমাকে পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করেছেন। গৃহশিক্ষকরাও সহায়তা করেছেন। সকলের সাহায্য ছাড়া এই রেজাল্ট সম্ভব ছিল না। ভবিষ্যতে আমি নার্স হতে চাই। শম্পা বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল শিক্ষকতা করার। কিন্তু আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। শিক্ষক হতে গেলে স্নাতক পড়ার পরে আবার বিএড করতে হবে। এমএ করতে হবে। অনেক টাকাও দরকার। আমার পরিবারে সেই সামর্থ্য নেই। তাই নার্সিং নিয়ে পড়তে চাই। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। মেয়ে স্কুলে প্রথম হওয়ার খবর শুনেই কেঁদে ফেলেন শম্পার মা। তিনি বলেন, যেকোনও ভাবেই হোক মেয়েকে নার্সিংয়ে পড়াতে চাই। ওর পড়াশোনার জন্য সরকারি কোনও সহায়তা পেলে ভালো হয়। পলাশী হাইস্কুলের প্রধান ক্লার্ক মলয়কান্তি মণ্ডল বলেন, মেয়েটি পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল। সব বিষয় গৃহশিক্ষক থাকলে আরও ভালো ফল হতো।
অন্যদিকে, দূরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করে উচ্চমাধ্যমিকে সফল হয়েছেন করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র স্যমন্তক সরকার। স্যমন্তক দুরারোগ্য ডুসেন মাসকুলার ডিসট্রফি( ডিএমডি) রোগে আক্রান্ত। তাঁর দেহের নীচের অংশ সম্পূর্ণভাবে অকেজো। যা আগামী দিনে তাঁর সমস্ত অঙ্গকে অকেজো করে দেওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। নির্মম সত্যটা তিনিও জানেন। তবু মনের অদম্য ইচ্ছায় শয্যাশায়ী থেকেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন। তিনি চলতে পারেন না। লিখতেও পারেন না। তাই রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ২৪৫ নম্বর পেয়েছেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর বয়সে তিনি দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে জানতে পারেন। কলকাতা সহ নানা জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়। বিদেশেও চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়া হয়। তাঁর বাবা পেশায় শিক্ষক সুব্রত সরকার ও মা সঞ্চিতাদেবী বলেন, ছোট থেকেই ও পড়াশোনায় ভালো ছিল। এখনও সে পড়তে ভালোবাসে। আমরা অনেক জায়গায় ওর চিকিৎসা করিয়েছি। স্যমন্তকের জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে জানার খুব ইচ্ছা। ইতিহাস পড়তেও ভীষণ ভালো লাগে। স্যমন্তক বলেন, গত কয়েক বছরে খবরের কাগজে দেখেছি আমার মতো অনেক পড়ুয়া পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাদের দেখে আমিও অনুপ্রাণিত হই।