কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার। যত বেশি ভোগ্যপণ্য সাধারণ মানুষ কিনছেন, ততই প্রসারিত হচ্ছে এসেন্স মার্কেট। সেই ক্রমবর্ধমান বাজারে নাকি গত কয়েক বছর ধরে খাবারদাবারের গন্ধের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মত, দেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে সুগন্ধি শিল্প। প্রায় ২০০টি সংস্থা সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যারা বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য সংস্থাকে সুগন্ধি বিক্রি করে। কলকাতায় এমন ব্যবসার সংখ্যা প্রায় ১০টি। সেই সব সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, ‘ন্যাচারাল এসেন্স’ অর্থাৎ প্রাকৃতিক গন্ধের মধ্যে এদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল গোলাপ, উদ এবং চন্দন। এর মধ্যে উদ-এর উৎপাদন এদেশে সামান্য হলেও, সুগন্ধি গোলাপের উৎপাদন ভারতের প্রায় কোথাও হয় না। চন্দনের বাজারও বেশ খারাপ। সেই জায়গায় ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছে মূলত ফলের গন্ধ।
কেন এই রূপান্তর? ধরা যাক চন্দনের কথাই। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, এদেশে যখন চন্দন কাঠের চোরাচালানের জন্য নামডাক ছিল চন্দনদস্যু বীরাপ্পানের, তখন নাকি বাজারে একটু স্থিতাবস্থা ছিল। বাজার নিয়ন্ত্রণ করত সেই চোরাই চন্দন। দামেও থাকত নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু সেই বাজার নষ্ট হয়ে যায় তাঁর মৃত্যুর পরেই। সরকারি নজরে কর্ণাটকে যেটুকু চন্দন উৎপাদন হয়, তার বেশিরভাগই চলে যায় বিদেশে। অন্যদিকে, এখানকার চন্দন গাছ নিয়ে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ব্যবসা করছে, সেখান থেকে আবার চড়া দরে চন্দন তেল কেনে এসেন্স সংস্থাগুলি। তাতেই ক্রমশ বাড়ছে চন্দন তেলের দাম। এখন এক কিলো চন্দন এসেন্সের দাম দেশীয় বাজারে গড়ে এক লক্ষ টাকা। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারত, বিশেষত অসমে যে উদ উৎপাদিত হয়, তার তেল বা এসেন্স অয়েলের দাম কিলো পিছু প্রায় ১৩ লাখ টাকা। যে গোলাপ থেকে ভালো অয়েল পাওয়া যায়, তা হয় মূলত বুলগেরিয়া এবং তুরস্কে। আমদানির পর দেশীয় বাজারে তার দাম কিলো পিছু প্রায় আট লাখ টাকা। এই যেখানে দামের বহর, সেখানে বাজার অন্য কোনও বিকল্পের সন্ধান করবে, সেটাই স্বাভাবিক।
ফ্র্যাগনান্সেস অ্যান্ড ফ্লেভারস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ঋষভ কোঠারি বলেন, যেহেতু উদ বা গোলাপের মতো প্রাকৃতিক এসেন্সিয়াল অয়েলের দাম এত চড়া, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘সিন্থেটিক’ বা নকল গন্ধের সন্ধান করা হয়। যে সংস্থা নকল গন্ধকে আসল সুগন্ধের যত কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে, তার বাজারদর তত ভালো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমরা দেখছি, খাবারের গন্ধের চাহিদা ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। স্ট্রবেরি, আম বা আনারসের গন্ধ জোগাতেই আমাদের কালঘাম ছুটছে। এখন মানুষ আনারসের ধূপ ব্যবহার করেন, সিগারেট ছাড়ার দাওয়াই হিসেবে স্ট্রবেরির গন্ধের গাম খান। এমনকী সাবান বা গায়ে মাখার পারফিউমেও ফলের গন্ধ চাইছেন মানুষ। ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলিও সেই দিকে ঝুঁকছে। আসল গন্ধ হোক বা নকল, যে কোনও খাবারের গন্ধই এখন হট কেক। পরিস্থিতি এমন, দুধের গন্ধের জন্যও মুখিয়ে আছে হরেক সংস্থা!
এই ধরনের গন্ধ যে শুধু ভারতেই হচ্ছে, তা নয়, জানিয়েছেন কলকাতাকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী ঋষভ কোঠারি। গন্ধ-শিল্পের সর্বভারতীয় সংগঠনটির শীর্ষকর্তা হিসেবে তিনি বলেন, গত বছর বিশ্বে যত টাকার সুগন্ধি বিক্রি হয়েছে, তার প্রায় ৩৮.২৩ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছিল এশিয়ার দেশগুলি। সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করেছে ভারতের মতো দক্ষিণ-পূর্বের দেশগুলি। তাঁদের সংগঠনটিও সুগন্ধির উপর শিক্ষামূলক নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে বিশ্বের চাহিদা ও তার জোগান সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা গড়ে ওঠে।