পাপ্পা গুহ, উলুবেড়িয়া: খাতায় কলমে পারুল দোলুইয়ের বয়স ৭৫ বছর। কিন্তু দেখতে আরও বয়স্ক লাগে। বার্ধক্য ছাপ ফেলেছে চেহারায়। বার্ধক্য ভাতা পান। রেশন পান। তা দিয়ে সংসারটা কোনওরকমে চলে যায়। সরকার নিয়মিত ভাতা দেয় বলে মনে মনে কৃতজ্ঞ তিনি। ভোট এলে কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধ করতে আসেন। এবারও এসেছিলেন প্রিয় দলকে ভোট দিয়ে জেতাতে। উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভার নোনা দলুই পাড়ার বাসিন্দা পারুল দোলুই (৭৫)। সোমবার সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বেশ খানিকটা দূরে ভোটকেন্দ্র। রোদ বাড়ার আগে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছে ছিল। তবে কেন্দ্রে পৌঁছে দেখেন দীর্ঘ লাইন পড়েছে। দাঁড়িয়ে পড়েন পারুল। রোদ চড়চড় করে চড়তে থাকে। কষ্ট হচ্ছিল খুব। তবুও দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রিয় দলকে ভোটটা না দিতে পারলে শান্তি পাবেন না। একসময় লাইন শেষ হল। ভোট দিতে ঢুকলেন পারুলদেবী। প্রিসাইডিং অফিসার তাঁর নাম খতিয়ে দেখলেন। তারপর জানালেন, আপনার নাম ভোটার লিস্টে নেই। পারুলদেবী এর আগে জীবনে এত অবাক হননি। এ কথা শুনে যতটা হলেন। জীবনে বহুবার ভোট দিয়েছেন। গত ভোটেও দিয়েছেন। হঠাৎ এই লোকসভা নির্বাচনে নাম কাটা গেল? কেন? কারণ কী? কে কাটল? কী জন্য কাটা গেল নাম? হাজার একটা প্রশ্নের ভারে থরথর করে কাঁপতে থাকেন বৃদ্ধা। তবে তাঁকে বুথ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। কাঁপতে কাঁপতেই বুথ ছাড়লেন পারুল। শরীরে এক ফোঁটা শক্তি অবশিষ্ট নেই যে, বাড়ি ফিরতে পারবেন।
বাইরে বেরিয়ে তিনি জানালেন, ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ‘ডিলিটেড’ শব্দটি স্পষ্ট করে লেখা। তাঁর ভোটকেন্দ্র উলুবেড়িয়া নোনা উচ্চ বিদ্যালয়। সকাল ন’টা নাগাদ উদভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়েছিলেন স্কুলের সামনে। হাতে নিজের ভোটার কার্ড। বলেন, ‘বাবা আমাকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বলছে আমার নাম নাকি নেই। এতবছর ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু এই প্রথম আমি পারলাম না।’ আতঙ্কে তাঁর মুখ রক্তহীন। সাদা কাগজের মতো লাগছে। হাত ধরে প্রশ্ন করলেন, ‘ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে। আমার বার্ধক্য ভাতার কী হবে? রেশন কী পাব?’ ভোট মিটলে তা জানতে উলুবেড়িয়া পুরসভায় যাবেন বলে জানালেন বৃদ্ধা পারুলদেবী। নির্বাচন কমিশন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক সময় বিএলও’দের কাজের গাফিলতির কারণে এইরকম সমস্যা তৈরি হয়। তবে পরে ভোটার তালিকায় ছ’নম্বর ফর্ম ফিলাপ করলে পুনরায় তালিকায় নাম উঠে যায়। এই তথ্য পারুলদেবীর জানা দরকার। যে দল তাঁকে ভাতা দেয়। যে দলকে তিনি ভোট দিয়ে আসছেন এতদিন ধরে, সেই দলের কেউ না কেউ নিশ্চয় এ তথ্য পারুলের কানে তুলে দেবে, এ আশাই করছেন দলুই পাড়ার বাসিন্দারা।
নিজস্ব চিত্র