পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা।প্রতিকার: একটি ... বিশদ
এমনই অবাক কাণ্ড ঘটেছে বিরাটির বিদ্যাসাগর সরণিতে।ওই পাড়ার বাসিন্দা বছর পঁচাত্তরের শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা উপসর্গ নিয়ে খড়দহের বলরাম হাসপাতালে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ৪ নভেম্বর। একই দিনে ওই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন খড়দহের এম এম গোস্বামী রোডের বাসিন্দা মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায় (৭৫)। এরপর ৭ নভেম্বর বলরাম হাসপাতাল থেকে রোগীকে রেফার করা হয় বারাসতের জিএনআরসি হাসপাতালে। তখনই হয় যাবতীয় গন্ডগোল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে নাম বিভ্রাট ঘটে। মোহিনীমোহনবাবু জিএনআরসি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু রিপোর্টের নাম অনুসারে সকলেই তাঁকে শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেন। আর শিবদাসবাবু চিকিৎসাধীন ছিলেন বলরাম হাসপাতালে। তাঁকে চিহ্নিত করা হয় মোহিনীমোহনের নামে।
এরপর ১৩ নভেম্বর মারা যান মোহিনীমোহন। কিন্তু শুধু নামের ভুলেই রটে যায় মারা গিয়েছেন শিবদাসবাবু। সেইমতো হাসপাতাল থেকে বন্দোপাধ্যায় পরিবারকে ফোন করে জানানো হয় শিবদাসবাবু মারা গিয়েছেন। শিবদাসবাবুর স্ত্রী জীবিত রয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, শনাক্তকরণের সময়ও দেহটি যে শিবদাসবাবুর নয়, তা কেন বুঝতে পারলেন না তাঁর পরিবারের লোকজন?
শনাক্তকরণের পর সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেহ পোড়ানো হয়। বাবা মারা গিয়েছেন এটা ধরে নিয়েই কাছা পরে নিয়ম-আচার শুরু করেন শিবদাসবাবুর ছেলে বুবুন। বিরাটির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে শুরু হয়ে যায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের তোড়জোড়।
অন্যদিকে, টেলিফোন মারফত হাসপাতাল থেকে মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায়ের খবর নিতেন তাঁর পরিবারের লোকজনরা। সুস্থ আছেন এটাই জানানো হতো রোজ। কিন্তু তিনি যে আদৌ মোহিনীমোহনবাবু নন তা এতদিন বুঝতেও পারেননি ছেলে সুদীপ মুখোপাধ্যায়। ঘটনাটি সামনে আসে শুক্রবার সন্ধ্যায়। বলরাম হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা মুখোপাধ্যায় পরিবারে ফোন করে বলেন, মোহিনীমোহনবাবু সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। আপনারা হাসপাতলে এসে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালে এসে হুইলচেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিকে দেখেই হতচকিত হয়ে যান মুখোপাধ্যায় পরিবারের লোকজন। সুদীপবাবু জানান, আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলি, হুইল চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তি তো আমার বাবা নন! তাহলে মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায় গেলেন কোথায়?
এরপরই শোরগোল পড়ে যায় হাসপাতাল চত্বরজুড়ে। হাসপাতালের কাগজপত্র ঘেঁটে জানা যায়, মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায় মারা গিয়েছেন ১৩ নভেম্বর। আর যিনি বেঁচে রয়েছেন তিনি শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়!
মর্মান্তিক ছবি হল, শিবদাসবাবুর খবর পেয়ে যখন হাসপাতালে এলেন ছেলে তখন তাঁর পরনে সাদা কাছা। বাবাকে দেখে হতচকিত হয়ে যান ছেলে। রাতেই বাড়ি নিয়ে যান। আর শিবদাসবাবু যখন বাড়ি পৌঁছলেন, তখন ছাদে প্যান্ডেল করা রয়েছে তাঁরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের! শনিবার সকাল থেকে বিরাটির বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ভিড় জমান বন্দোপাধ্যায় বাড়ির সামনে। যদিও শিবদাসবাবু, তাঁর ছেলে বা বউমা কথা বলতে চাননি পাড়ার লোকজন ও সংবাদ মাধ্যমের কাছে।
এই ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের গাফিলতি উড়িয়ে দিচ্ছেন না জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়। তাঁর বক্তব্য, ঘটনার তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যেই রিপোর্ট জমা পড়ে স্বাস্থ্যভবনে। জানা গিয়েছে, জমা পড়া রিপোর্টে এই চারজনের গাফিলতি ধরা পড়েছে। এদিন রাতেই দু’জন নার্স, একজন সিস্টার-ইন-চার্জ ও একজন চিকিৎসককে শো-কজ করা হয়। তিনদিনের মধ্যে তাঁদের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। খড়দহ পুরসভার প্রশাসক কাজল সিনহা বলেন, দুর্ভাগ্যজনক। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে।
বিরাটির বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া প্রতিবেশীদের একজন বললেন, ‘বাক্সবদল’ সিনেমা দেখেছি। এবার স্বচক্ষে দেখলাম জীবিত আর মৃতের অদল-বদল। অন্যদিকে, খড়দহের মুখোপাধ্যায় পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। এত বড় ভুলের জন্য পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।